এই ধরনের বাসন মাজার দুর্দান্ত উপকরণ হল তেঁতুল। উষ্ণ গরম জলে তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে একটা ক্বাথ তৈরি করে নিতে হবে। এ-বার ওই ক্বাথের মধ্যেই তেঁতুলের শক্ত তন্তুগুলি আলাদা হয়ে আসবে। সেই শক্ত তন্তুগুলি ব্যবহার করেই থালা-বাসন এমনকী পিতলের বিগ্রহও পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। এটা হচ্ছে একেবারে পরিবেশবান্ধব একটা উপায়।
তবে প্রযুক্তি তো এগিয়েছে। তাই আজকাল আধুনিক কিছু উপায়ও আমাদের হাতে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হল রাসায়নিক। আসলে এই ধরনের ধাতব বাসন মাজার জন্য অনেকেই এই রাসায়নিকের সাহায্য নিচ্ছে। কিন্তু এতে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়। কারণ রাসায়নিকের জেরে ধাতু ক্ষয়ে গিয়ে তাতে দাগ পড়ে যেতে পারে। তাই লক্ষ্মী পুজোর আগে কাঁসা-পিতলের ধাতব থালা-বাসন পরিষ্কার করার কয়েকটি সহজ উপায় দেখে নেওয়া যাক।
advertisement
আরও পড়ুন : হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে দরকার শুধু একমুঠো এই বাদাম, জানুন দিনের কখন খাবেন
পিতল, কাঁসা এবং তামার থালা-বাসন পরিষ্কার করার উপায়:
আসলে এই ধরনের ধাতব সামগ্রী বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। কোনওটা রোজকার ব্যবহারের, তো কোনওটা আবার সচরাচর ব্যবহার করা হয় না। মসৃণ পৃষ্ঠতল বিশিষ্ট রোজকার ব্যবহারের সামগ্রী খুব সহজেই পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। কিন্তু যেগুলিতে সূক্ষ্ম কাজ আছে, সেগুলি পরিষ্কার করা একটু মুশকিল। তবে চিন্তা নেই, আমরা সেই উপায় বলে দেব। তা-হলে ঢুকে পড়া যাক মূল প্রসঙ্গে।
প্রি-ক্লিনিং রুটিন- যদি লক্ষ্মী প্রতিমা থাকে:
সরঞ্জাম: নরম অথবা মাঝারি লোমের ব্রাশ (যা সূক্ষ্ম জায়গাগুলি পরিষ্কার করতে পারে), ধোওয়ার জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য ওয়াইপ অথবা তোয়ালে কিংবা ন্যাকড়া, শুকনো করে জন্য নরম মসলিন কাপড়, ন্যাচারাল ক্লিনিং স্পঞ্জ কিংবা নরম স্পঞ্জ প্রভৃতি।
প্রথমে ধাতুটাকে সনাক্ত করতে হবে। এর পর যেখানে যেখানে নোংরা বেশি হয়, সেই জায়গাটাও চিহ্নিত করে নিতে হবে।
এ-বার সেই ধাতব মূর্তির একটা পেপার টাওয়েল দিয়ে ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। এর পর একটি কাপড় দিয়ে মুছে সেখানকার গ্রিজ এবং তেলচিটে ভাবও দূর করে নিতে হবে।
এর পর বিগ্রহ ভাল করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। যাতে চন্দন বা কুমকুমের দাগ না-লেগে থাকে।
ফুটন্ত জল
এই পদ্ধতিতে কাঁসার বাসন পরিষ্কার করতে হবে। প্রথমে জল ফুটিয়ে নিতে হবে। এর পরে তার মধ্যে তেঁতুলের ক্বাথ যোগ করতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে অল্প একটু ভিনিগারও। তেলচিটে বাসনপত্র একটি কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এর পর তা ফুটন্ত জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। কতক্ষণ বাসন ডুবিয়ে রাখতে হবে, তা নির্ভর করবে সেই বাসন কতটা তেলচিটে, তার উপর। তবে এর পরেও যদি কাঁসার বাসনের তৈলাক্ত ভাব পরিষ্কার না হয়, তা-হলে একটি মাইল্ড ডিশ ওয়াশ ব্যবহার করে তা ধুয়ে নিতে হবে। ধোওয়া হয়ে গেলে একটা পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে তা শুকনো করে মুছে নিতে হবে। শুধু বাসনই নয়, এই পদ্ধতিতে প্রদীপও পরিষ্কার করা যাবে।
আরও পড়ুন : ঠাকুর দেখে, দেদার আড্ডা ও খাওয়াদাওয়ার ক্লান্তি ও হজমের গণ্ডগোল দূর করুন এই জাদু পানীয়ে
প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে ব্রোঞ্জ, পিতল এবং তামার সামগ্রী পরিষ্কারের উপায়:
লেবু অথবা ভিনিগার এবং নুন সহযোগে পরিষ্কার:
প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে রান্নার বাসনপত্র পরিষ্কার করার সবথেকে সহজ উপায় হল ভিনিগার অথবা লেবু এবং নুনের মিশ্রণ। বাসনের পৃষ্ঠতলের উপর অল্প করে ভিনিগার ঢালতে হবে এবং তার মধ্যে নুন ছড়িয়ে নিতে হবে। এ-বার হালকা হাতে কিচেন স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে ঘষে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। এর পর বাসন ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে তা শুকিয়ে নিতে হবে।
তেঁতুলের ক্বাথ ও ডিশওয়াশিং পাউডার বা লিক্যুইড:
তামার বাসনপত্র পরিষ্কার করার জন্য তেঁতুলের ক্বাথ এবং ডিশওয়াশ পাউডার অথবা লিক্যুইড ব্যবহার করতে হবে। দুঘণ্টা ধরে গরম জলে তেঁতুল ভিজিয়ে রাখতে হবে। যাতে একটা ক্বাথ তৈরি হয়। এ-বার তেঁতুলের শক্ত তন্তু দিয়ে তা বাসন মেজে নিতে হবে। এক বার মাজা হয়ে গেলে বাকি ময়লা উষ্ণ গরম জল অথবা সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এর পর ডিশওয়াশ ক্লিনার দিয়ে মেজে ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে।
ভিনিগার অথবা লেবুর রস আর ময়দা:
মনে হতেই পারে যে, ময়দা কীভাবে বাসন পরিষ্কার করে। আসলে কিন্তু ময়দা সাফাইয়ের দারুন উপাদান। ভিনিগার অথবা লেবুর রসের সঙ্গে ময়দা মিশিয়ে বাসন পরিষ্কার করা যায়। তার পরে তা ধুয়ে নিয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে।
প্রাকৃতিক স্ক্রাবিং উপাদানের সাহায্যে পিতলের বাসন পরিষ্কার করার উপায়:
ডায়াটোমিশাস আর্থ:
এটা এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যাব্রেসিভ পাউডার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, এটা কোথায় পাওয়া যায়। অনলাইনে এবং বিভিন্ন নার্সারিতে নামমাত্র দামে পাওয়া যায় এই ডায়াটোমিশাস আর্থ। এর মধ্যে অবশ্য কোনও রাসায়নিক সংযোজন থাকে না। ডায়াটোমিশাস আর্থ এবং জলের মিশ্রণ ময়লা বাসনের উপর ছিটিয়ে নিতে হবে। কয়েক মিনিট রাখার পরে একটা নরম স্পঞ্জ অথবা নরম কাপড় দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তবে যদি এটা সঠিক ভাবে না-করা হয়, তা-হলে বাসনের উপর দাগ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কেচ-আপ:
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। কেচ-আপও পিতলের বাসন পরিষ্কার করার একটা দারুন উপাদান। স্বল্প কেচ-আপ নিয়ে একটা পরিষ্কার কাপড়ের উপর ছিটিয়ে নিতে হবে। তার পর সেই কাপড় দিয়ে পিতলের বাসন ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সাবান এবং উষ্ণ গরম জল দিয়ে পিতলের বাসন পরিষ্কারের উপায়:
অ্যান্টিক জিনিসপত্র পরিষ্কার করার জন্য একটা দারুন উপায় হল সাবান আর গরম জল। এতে সেই সামগ্রীর জৌলুষও বজায় থাকে। এর জন্য ব্যবহার করতে হবে ডিশওয়াশ সাবান। নরম স্পঞ্জ অথবা কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। এর পর উষ্ণ গরম জল দিয়ে সাবানের অবশিষ্টাংশ ধুয়ে নিয়ে তা সঠিক ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
পোস্ট ক্লিনিং রুটিন:
সরঞ্জাম: নরম কাপড়, প্রোটেক্টিভ ওয়্যাক্স প্রভৃতি।
বাসন মেজে পরিষ্কার করার পর তা শুকিয়ে নিয়ে রোদে দিতে হবে। যাতে অবশিষ্ট আর্দ্রভাব কেটে যায়।
আরও এক বার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ধুলোবালি ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিলে ভাল।
মূর্তির ক্ষেত্রে প্রোটেক্টিভ ওয়্যাক্সের একটা হালকা প্রলেপ দিতে হবে। যাতে তা বিবর্ণ না-হয়ে যায়। তবে বাসনের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করলে চলবে না।