আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক বীরকুমার শী’র কথায়, প্রায় ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে শ্রীচৈতন্যদেব নীলাচল গমনের পথে এই এলাকা অতিক্রম করেছিলেন। নৌপথেই তিনি সবং থেকে কেলেঘাই নদী পথেই এসেছিলেন। সেই সময় এই নদীর ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্কেশ্বর মহাদেবের মন্দির ছিল শ্রীচৈতন্যদেবের বিশ্রামস্থল। ঠিক এই স্থানেই বিশ্রামের জন্য থামেন শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর যাত্রাপথের এই বিরতি এই এলাকার স্থানীয় মানুষের কাছে পবিত্র ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে এখনও স্মরণে রাখা হয়। বর্তমানের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভাগ তখন না থাকলেও তিনি অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং এলাকা থেকে নৌকাযোগে কেলেঘাই নদী পার হয়ে পটাশপুরের এই পাথরঘাটায় এসে অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেন।
advertisement
স্থানীয়দের ভক্তিভাব, এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত বিশ্বাস—সব মিলিয়ে এই পাথরঘাটা ঘাট আজও শ্রীচৈতন্যদেবের স্মৃতি বহন করে চলছে। বিভিন্ন গল্প ও বর্ণনায় উঠে আসে, এই ঘাট তাঁর পদস্পর্শে যেন পবিত্র পবিত্র হয়ে উঠেছে। আজও ঘাটের চারপাশের প্রকৃতি এবং পুরোনো দিনের নিদর্শনগুলোর মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে তাঁর আগমনের স্মৃতি। ইতিহাসবিদদের কথায়, এই যাত্রা ছিল তাঁর ভক্তি ও ধর্ম প্রচারের প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই এই ঘাটের গুরুত্ব শুধু ভৌগোলিক নয়, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ভাবেও অত্যন্ত মূল্যবান।
আরও পড়ুন : মুঠো মুঠো পেইনকিলারের দিন শেষ! মেথি-আদাতেই পগারপার শীতকালে হাঁটুব্যথার বিষ-কামড়!
অনেক পরিবর্তন এসেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। মেদিনীপুর জেলা থেকে পূর্ব ও পশ্চিমের প্রশাসনিক বিভাজন হয়েছে, নদীর ধারের গ্রামগুলোর চেহারা বদলেছে, কিন্তু এই ঘাটের স্মৃতিগুলো একই রয়ে গিয়েছে। আজও এই ঘাটে দাঁড়ালে মনে পড়ে যায় পাঁচ শতাব্দীরও আগের পুরনো সেই দিনের কথা, যখন শ্রীচৈতন্যদেব নৌকাপথে এই ঘাটে প্রথম পা রেখেছিলেন। স্থানীয় মানুষের কাছে তাই পাথরঘাটা পঞ্চপাণ্ডব ঘাট শুধু একটি সাধারণ নদীর ঘাট নয়—এই ঘাট শ্রীচৈতন্যদেবের ঐতিহাসিক পদচিহ্নের অমূল্য স্মৃতি বহন করা এক পবিত্র স্থান।