জরাজীর্ণ এই জমিদার বাড়িতে পা রাখলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ইতিহাসের পাতা উল্টালেই মিলবে জমিদারির শিকড়। অরিন্দম ভৌমিক তাঁর ‘মেদিনীকথা’ গ্রন্থে বলেছেন, প্রায় ছয় পুরুষ আগে এগরার ভদ্রছত্রি থেকে মন্নিরাম ভূঁইয়া এই গ্রামে এসে জমিদারি শুরু করেন। জমিদার বাড়িকে ঘিরে রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা। এক সময় কাঁথি কিশোরনগর গড়ের রাজা যাদবরাম ইংরেজদের খাজনা দিতে না পেরে মল্লিকপুরের জমিদারদের কাছ থেকে ৫,০০০ টাকা ধার নেন এবং বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কণকপুর, কিশোরনগর ও জালালখাঁন বাড় এলাকার বায়নানামা জমিদারের হাতে তুলে দেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রমরমা আর সুনাম। কিন্তু সেই সুনামের মাঝেই লুকিয়ে আছে রোমহর্ষক এক বিবাদ ও রক্তের কাহিনী।
advertisement
এক সন্ধ্যায় জমিদার মন্নিরাম ভূঁইয়া বালিঘাই সেতুর কাছে একটি বাড়িতে আনন্দে মত্ত ছিলেন। ঠিক সেই সময় এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ এক দারোগাও সেখানে পৌঁছান। দরজা খুলতে বললে মন্নিরাম ভিতর থেকে জানতে চান কে এসেছে। উত্তরে দারোগা তাকে গালিগালোজ করে। তাতেই প্রচণ্ড রেগে যান মন্নিরাম। তিনি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে দারোগাকে আক্রমণ করেন এবং শেষে জলে ভাসিয়ে দেন। পরে মামলা শুরু হয়। সেই মামলার শুনানিতে হাতির পিঠে চড়ে মেদিনীপুর যেতেন মন্নিরাম, সঙ্গে ঘুষ হিসেবে দিতেন মাছ—যার পেটে থাকত রুপো-পয়সা। ধীরে ধীরে এই ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং জমিদারের পরিচিতি হয় ‘দারোগা মারা ভূঁইয়া’ নামে।
রহস্যে ঘেরা এই জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা বেশ শোচনীয়। এগরা কলেজের অধ্যাপক ডঃ মলয় বারিকের মতে, জমিদার বাড়িটি সম্পূর্ণ ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে, যে-কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। তবুও এখানে আজও বসবাস করছেন জমিদার পরিবারের মানুষ। বাড়ির ভিতরে রয়েছে প্রাচীন কিছু মন্দির, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো রঙ্গমলিকা মন্দির। ওড়িশার যাযপুর থেকে বনবিহারী চক্রবর্তী রঙ্গমল্লিকাকে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও রয়েছে লক্ষ্মীজনার্দন এবং মধুসূদনের মন্দির। দিঘা–রামনগর হয়ে এগরা বা কাঁথি থেকে বেলদা-কাঁথি রাজ্য সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই জমিদার বাড়িরতে। দিঘার সমুদ্রসৈকত ঘুরে রহস্য-রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে একবার ঘুরে আসতে পারেন এই ‘দারোগা মারা ভূঁইয়া’র জমিদার বাড়ি।





