পূর্ব বর্ধমান বললেই যেমন সীতাভোগ ও মিহিদানার কথা মনে পড়ে, ঠিক তেমনই মঙ্গলকোট ব্লকের নিগন গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘মন্ডা’ এখন মিষ্টিপ্রেমীদের মুখে মুখে। নিগনের এই মন্ডার স্বাদ নিতে প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখানকার ব্যবসায়ীরা দৈনিক প্রায় ১০০ কেজি ছানা দিয়ে মন্ডা তৈরি করছেন।
advertisement
নিগনের এক মন্ডা বিক্রেতা রমেশ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের মন্ডা নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে, মন্ডা বাইরের দেশেও যায়। গুজরাট, কেরালাতেও যায়। নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে অনেকেই মন্ডা নিতে আসেন। রাস্তা দিয়ে যারা যায় তারাও গাড়ি থামিয়ে মন্ডা কেনেন। এখানে ১০ টাকা ও ৫ টাকা দুই প্রকারের মন্ডা পাওয়া যায়।’ নিগনের মণ্ডা তৈরির ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু বিশেষ পদ্ধতি, যা আজও গোপন রেখেছেন এখানকার কারিগরেরা। তাঁদের মতে, এই পদ্ধতি প্রকাশ্যে এলে নিগনের মন্ডার নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা নষ্ট হতে পারে। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেই কৌশল রয়ে গেছে পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তবে এক মন্ডা প্রস্তুতকারক শ্রীমন্ত প্রধান জানালেন, ‘জল ছানা এখানে আসে । হালকা চাপ দিয়ে ছানা থেকে জল বের করা হয় । এরপর কড়াইয়ে ছানা দিয়ে তার সঙ্গে পরিমাণ মতো চিনি দেওয়া হয়। তারপর পাক করা হয়। এরপর গামছা পেতে তার ওপরে পেটানো হয়। আমাদের মন্ডা খুব নরম, হাত দিলেই ভেঙে যাই। চিনি কম থাকে সেই জন্য আমাদের মন্ডার কোয়ালিটি ভাল। আর এই শীতের সময় নলেন গুড়ের পাটালি মেশান হয়। ‘ যদিও সারা বছরই নিগনের মণ্ডার চাহিদা থাকে, তবে শীত এলেই বাড়তি কদর পায় এই মিষ্টি। কারণ এই সময় মন্ডার ভেতরে যোগ হয় নলেন গুড়ের স্বাদ। শীতকালেই শুধু নলেন গুড়ের পাটালি ব্যবহার করে তৈরি হয় বিশেষ মন্ডা, যার স্বাদ সাধারণ মন্ডার তুলনায় বহুগুণ বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শীতের সকালে গরম গরম মন্ডা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় সবটাই বিক্রি হয়ে যায়।
নদিয়া জেলার এক ক্রেতা আশরাফুল শেখ বলেন, ‘এখানকার মন্ডা অবশ্যই ভাল। আমি খেয়েছি, এখানের মন্ডা খুব জনপ্রিয়। প্রায় খায় মাঝে মাঝে বাড়িও নিয়ে যায়। বাড়ির বাচ্চারা খুব পছন্দ করে।’ নিগনের মন্ডার জনপ্রিয়তা আজ আর শুধু বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নেই। এই মন্ডা দেশ পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে আমেরিকাতেও। পাশাপাশি গুজরাট, কেরালা, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত পাঠানো হয় এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। শীতকালে নলেন গুড়ের ছোঁয়ায় নিগনের মন্ডা যেন আরও একধাপ এগিয়ে যায় স্বাদের জগতে,যার টানে আজও ছুটে আসেন অগণিত মিষ্টিপ্রেমী।





