চুল নিয়েও আমরা অনেকেই প্রতিদিন নানা সমস্যায় ভুগি। চুল পড়া, স্ক্যাল্পে সংক্রমণ, খুশকি, রুক্ষ ও ভঙ্গুর চুল- প্রভৃতির মতো সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভরসা করা যেতেই পারে আয়ুর্বেদের উপরে।
সমস্যার মূল:
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, আমাদের চুল, নখ এবং দাঁত হল অস্থিকলার উপজাত অংশ। এই অংশগুলি শরীরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। মাথার ত্বকের মাধ্যমে চুলও স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। আবার এই চুলের সঙ্গে অন্ত্রের রয়েছে মারাত্মক যোগাযোগ।
advertisement
ফলে শরীরের কোনও অংশে কোনও রকম ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে চুলের উপরও তার প্রভাব পড়তে পারে। সেটা আমরা বুঝতেও পারি। যেমন মানসিক চাপ, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অসুস্থতার কারণে চুলের ক্ষতি হতে পারে। আবার বাইরে থেকে নানা রকম রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে বা তাপ প্রয়োগ করে চুলের স্টাইল করার জন্য চুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন - চার কিশোর-কিশোরী চোখে স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় মঞ্চে তলোয়ার হাতে, সাব জুনিয়র ন্যাশানালে বড় পরীক্ষা
চিকিৎসা:
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, চুল সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যার মোকাবিলা করতে গেলে সমস্যার ভিতরে থাকা কারণগুলি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তারপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাদ্যের সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম জীবনচর্যা হল প্রথম ধাপ। শুধু এই সহজ পদক্ষেপটিই চুল পড়া অনেকাংশে বন্ধ করতে পারে। শুধু তাই নয়, চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করলে বিশেষ করে প্রাণায়াম শরীরের উপর দারুন প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন - রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করছে ছোট ছেলেটি, রোহিত নিজে গেলেন এগিয়ে, তারপরেই ম্যাজিক, ভাইরাল ভিডিও
দূরে থাক রাসায়নিক:
চুলের যত্নে আমরা অনেক সময়ই বাজার থেকে বোতলবন্দি পণ্য কিনে থাকি। রাসায়নিক মিশ্রিত ওই সব পণ্য চুলের উপকার যত করে, হয় তো তার চেয়ে বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রেখে যায়। অথচ, প্রকৃতিতে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা চুলের যে কোনও সমস্যায় কাজে আসতে পারে। যেমন,
অশ্বগন্ধা—
'ভেষজ রানি' নামে পরিচিত এই ওষধির অগণিত উপকারিতা রয়েছে। চুলের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। এটি অবিলম্বে চুল পড়া বন্ধ করতে পারে। পুনরায় চুলের বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি ফিরিয়ে আনতে পারে। অশ্বগন্ধার গুঁড়ো বা বড়ি খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
অশ্বগন্ধার গুঁড়ো সামান্য জল মিশিয়ে পেস্ট করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধুয়ে ফেলতে হবে। শ্যাম্পু বা মেহেন্দির সঙ্গে মিশিয়েও অশ্বগন্ধার গুঁড়ো মাথায় লাগানো যেতে পারে। ১৫ মিনিটের মতো চুলের মাস্ক হিসাবে রেখে দিতে হবে। এতে মাথার ত্বক, ফলিকলস এবং চুলের টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে চুলের বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হবে।
রিঠা, শিকাকাই:
রিঠা (স্যাপিন্ডাস মুকোরোসি) এবং শিকাকাই (সেনেগালিয়া রুগাতা)— দু’টি অতি পরিচিত ভেষজ, যা চুল পরিষ্কার করার জন্য ভারতীয়রা বহু বছর ধরেই ব্যবহার করছেন। এই ভেষজগুলিকে পিষে গরম জল মিশিয়ে ফেনাযুক্ত সাবানে পরিণত করা যায়। যা কোনও রকম রাসায়নিক ছাড়াই চুল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। শুধু চুল নয়, মাথার ত্বক পরিষ্কার করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি চুলের ডগা পর্যন্ত আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আসলে চুল এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখাই হল স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল একঢাল চুলের মূল চাবিকাঠি। তাই চুল ধোয়ার এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার সঠিক উপায়।
হেনা:
হেনা বা মেহেন্দি হল আরেকটি ভেষজ যা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ এটি সরাসরি মাথার ত্বকে প্রচুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। বাইরে থেকে প্রয়োগ করা রাসায়নিক রঙ, তাপ ইত্যাদি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য এটি খুবই উপকারী। চুলে রঙ করতে হলে কড়া রাসায়নিকযুক্ত রঙের পরিবর্তে হেনা ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলের মাস্ক হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে ২০ দিন অন্তর।
এছাড়া, জুয়া, মালভা, গুয়ারানা, ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ বাবাসু তেল, জলপাই এবং নারকেল তেলের মতো আয়ুর্বেদিক উপাদান প্রাকৃতিক ভাবে চুলে পুষ্টি জোগায়। অকালপক্কতা, শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। অতএব, প্রয়োজন অনুসারে মাথায় তেল দেওয়াটাও দরকার, সবচেয়ে ভাল হয় রাতে শোওয়ার আগে দিতে পারলে। সকালে শ্যাম্পু করে নিলেই রেশমি নরম চুল নিয়ে এই শীতে আর ভাবতে হবে না।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)
Keywords: Ayurved, Hair Care, Hair Colour