ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে ওড়িশার পুরী জেলার সাক্ষীগোপাল থেকে উদ্ধব নন্দ ও উচ্ছব নন্দ নামে দুই সহোদর ব্রাহ্মণ পটাশপুর এলাকায় চলে আসেন। তাঁরা ছিলেন সামবেদীয় ব্রাহ্মণ এবং প্রথমে পঁচেটগড় জমিদারবাড়ির মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে কনিষ্ঠ উচ্ছব নন্দ বসতি গড়েন মুগবেড়িয়ায়, আর জ্যেষ্ঠ উদ্ধব নন্দ স্থায়ী হন পটাশপুর থানার টেপরপাড়া গ্রামে। সেখানেই তিনি ছোট মাপের একটি জমিদারি প্রতিষ্ঠা করে নিজের বাড়ির পাশে নির্মাণ করেন এক জগন্নাথ মন্দির।
advertisement
ইটের তৈরি পূর্বমুখী দালান-রীতির এই মন্দিরের সামনে রয়েছে ত্রি-খিলান অলিন্দ এবং পেছনে এক-দ্বারী গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের বেদী নির্মিত হয়েছে ১০৮টি মাকড়া পাথরের স্ল্যাব দিয়ে। মন্দিরের উপরে রয়েছে আমলক, কলস ও বিষ্ণুচক্রসহ এক চতুষ্কোণ স্তম্ভ। যদিও বর্তমানে মন্দিরটি জরাজীর্ণ, তবুও সংস্কারের পর এখন তা নতুন রূপে দর্শনীয় হয়ে উঠেছে।
এখানে প্রতি ১২ বছর অন্তর ‘নব কলেবর’ হয় — অর্থাৎ নতুন বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। প্রতিদিন দু’বার পুজো করা হয় এবং ভক্তরা নিজেরা ভোগ নিবেদন ও বস্ত্রদান করেন। তবে ভোগ রান্নার জন্য মন্দিরের নিজস্ব ব্রাহ্মণ পাচক ও বাসনপত্রই ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।
মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত তুষার কান্তি নন্দ বলেন, “এই মন্দিরটির ইতিহাস বহু প্রাচীন। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমরা সেই ঐতিহ্য আজও আগলে রেখেছি। দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির যেমন দর্শনীয়, তেমনই ইতিহাস জানতে চাইলে পর্যটকরা একবার এই প্রাচীন জগন্নাথ মন্দিরেও ঘুরে যেতে পারেন। এখানে এলেই বোঝা যায়, কতটা ঐতিহ্য আর ভক্তির সঙ্গে এই স্থান জড়িয়ে আছে।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, যারা দিঘার কোলাহল থেকে কিছুটা শান্তি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য এই প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির হতে পারে এক অনন্য দর্শনস্থল। দিঘা ভ্রমণের শেষে এই ঐতিহাসিক মন্দির দর্শন আপনার ট্রিপকে আরও পূর্ণ করে তুলবে।





