হৃৎপিণ্ড যখন সংকুচিত হয়, তাকে সিস্টোলিক প্রেশার বলা হয় এবং চাপ সব চেয়ে বেশি থাকে। অন্য দিকে, হৃদপিণ্ডের সংকোচনের ঠিক আগের মুহূর্তে যখন ধমনীতে চাপ সব চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে ডায়াস্টোলিক প্রেশার বলা হয়। পরিমাপের পর এক জন ব্যক্তির রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ হয়, তবে ৯০ হল সিস্টোলিক চাপ এবং ৬০ হল ডায়াস্টোলিক চাপ।
advertisement
রক্তচাপের ধরন:
মানব দেহে মোট পাঁচ ধরনের রক্তচাপ দেখা যায়। যথা-- স্বাভাবিক রক্তচাপ, এলিভেটেড, হাইপারটেনশন স্টেজ ১, হাইপারটেনশন স্টেজ ২ এবং হাইপারটেন্সিভ ক্রাইসিস। এই ধরনগুলি সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
স্বাভাবিক রক্তচাপ :
এক জন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের জন্য আদর্শ রক্তচাপ হল ১২০/৮০ mmHg।
এলিভেটেড:
কোনও ব্যক্তির রক্তচাপের রিডিং যখন ক্রমাগত ভাবে সিস্টোলিক ১২০ mmHg থেকে ১২৯ mmHg হয় এবং ডায়াস্টোলিক ৮০ mmHg-এর কম হয়, তখন তাকে এলিভেটেড ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়। যে সমস্ত মানুষের এলিভেটেড ব্লাড প্রেশার রয়েছে, তারা সময়মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ না-করলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন - ওজন কমাতে বর্ষায় সাঁতার কাটা কতটা নিরাপদ? সংক্রমণের ঝুঁকি কতটা? কীভাবে এড়ানো যায়!
এলিভেটেড ব্লাড প্রেশারের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, এর কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। শুধুমাত্র নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপের মাধ্যমে এই সমস্যাটি ধরা যায়। এই সমস্যার কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এলিভেটেড রক্তচাপ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান এবং মাদন সেবন বন্ধ করা এবং একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চললে এলিভেটেড ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
হাইপারটেনশন:
স্টেজ ১:
রক্তচাপের রিডিং ক্রমাগত ভাবে সিস্টোলিক ১৩০ mmHg থেকে ১৩৯ mmHg হয় এবং ডায়াস্টোলিক ৮০ mmHg থেকে ৮৯ mmHg থাকলে তাকে হাইপারটেনশন স্টেজ ১ বলা হয়।
স্টেজ ২:
রক্তচাপের রিডিং যখন ক্রমাগত ভাবে সিস্টোলিক ১৪০ mmHg এবং ডায়াস্টোলিক ৯০ mmHg হয়, তাকে হাইপারটেনশন স্টেজ ২ বলা হয়।
হাইপারটেনশনের অনেক উপসর্গ রয়েছে। তবে অনেক সময় দেখা যায় যে, এক জন ব্যক্তির দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যা রয়েছে, অথচ তাঁর শরীরে কোনও উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না। এই কারণে অনেক সময় রক্তচাপের এই অবস্থাকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বা ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। অনুমান করা হয়, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। হাইপারটেনশনের উপসর্গগুলি হল-- তীব্র মাথাব্যথা, ক্লান্তি, চোখের সমস্যা, বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, প্রস্রাবে রক্ত এবং বুকে, ঘাড়ে বা কানে ব্যথা।
হাইপারটেনশন কী কী কারণে হতে পারে?
ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, অতিরিক্ত বিশ্রাম, অত্যধিক লবণ খাওয়া, অত্যধিক মাদক পান করা, মানসিক চাপ, বয়স, জেনেটিক্স, পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ এবং অনিদ্রা।
হাইপারটেন্সিভ ক্রাইসিস:
রক্তচাপের সব চেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা হল-- হাইপারটেন্সিভ ক্রাইসিস। এই অবস্থায় রক্তচাপের রিডিং ক্রমাগত ভাবে সিস্টোলিক ১৮০ mmHg এবং ডায়াস্টোলিক ১২০ mmHg থাকে। বিশেষ করে বয়স্করাই বেশি এই সমস্যায় ভোগেন।
আরও পড়ুন - যেমন সবার থেকে বোন আলাদা, উপহারও হোক সেরকম! রাত পোহালেই রাখি, দেখুন তো কোনটা বোনের পছন্দ হয়!
রক্তচাপের এই অবস্থা সাধারণত দুই ধরনের হয়-- হাইপারটেন্সিভ আরজেন্সি এবং হাইপারটেন্সিভ এমারজেন্সি ।
যখন কোনও ব্যক্তির রক্তচাপ ১৮০/১১০ mmHg হয়, তখন তাকে হাইপারটেন্সিভ আরজেন্সি বলা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনও গুরুতর ক্ষতি হয় না বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি হয় না। আরজেন্সি অবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে গেলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
অন্য দিকে, হাইপারটেন্সিভ এমারজেন্সি হল-- একটি খুবই সংকটজনক অবস্থা। এই ক্ষেত্রেও রক্তচাপ ১৮০/১১০ mmHg-এর মধ্যেই থাকে, কিন্তু এই অবস্থায় শরীরের অঙ্গ স্থায়ী ভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে।
হাইপারটেন্সিভ এমারজেন্সি হলে রোগীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (যেমন-- বিভ্রান্তি), মস্তিষ্কে রক্তপাত (স্ট্রোক), হার্ট ফেল, বুকে ব্যথা (Unstable Angina), ফুসফুসে তরল (Pulmonary Edema), অ্যানিউরিজম (Aortic Dissection) এবং হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
হাইপারটেন্সিভ ক্রাইসিসের উপসর্গগুলি হল-- শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, অসাড়তা/দুর্বলতা, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি এবং কথা বলতে সমস্যা হওয়া। হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীদের শরীরে এগুলির একটিও দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।