তিনি জানাচ্ছেন যে, ডেঙ্গি আসলে এক ধরনের ভাইরাল রোগ। যা সংক্রমিত এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ের ফলে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু ডেঙ্গিই নয়, এডিস মশার কামড়ের ফলে চিকনগুনিয়া অথবা জিকার মতো রোগও ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য মশার কামড়ের মতো একই রকম এই এডিস মশার কামড়। ফলে প্রথম দিকে ত্বকের উপর লালচে দাগ অথবা চুলকানি, স্বল্প ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। তবে এডিস মশার কামড়ের দিন কয়েক পরে জ্বর এবং ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মূলত হাত, পা কিংবা গোড়ালির মতো দেহের খোলা অংশে কামড় বসায় এই এডিস মশা। তবে সাধারণত ভোরবেলা অথবা বিকেলের দিকেই কামড়ায় এই মশা। যা একেবারেই ম্যালেরিয়ার বাহক মশার মতো নয়।
advertisement
ডা. জয়দীপ ঘোষ ডেঙ্গির উপসর্গ সম্পর্কে বলেন যে, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথমে প্রবল জ্বর আসে। সেই সঙ্গে থাকে তীব্র মাথা যন্ত্রণা, গোটা শরীরে ব্যথা, গাঁটে যন্ত্রণা। এর পাশাপাশি কখনও কখনও ত্বকে র্যাশ পর্যন্ত বেরোতে পারে। তবে এর ৪-৫ দিন পরেই আসল জটিলতার উদ্রেক হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল – আচমকাই প্লেটলেট কাউন্ট হ্রাস, পেট ব্যথা অথবা রক্তপাতের প্রবণতা। মাড়ি, নাক, প্রস্রাব অথবা মল দিয়ে যদি রক্ত পড়ে, তাহলে সাবধান হতে হবে। কারণ এমনটা হলে বুঝতে হবে যে, রোগ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এমনকী তা প্রাণঘাতী পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে।
আর তাই ডেঙ্গির চিকিৎসার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল – হাইড্রেশন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগীর ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডের প্রয়োজন হয়। আবার লো প্লেটলেট কাউন্ট থাকলে ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হতে পারে। সময়ে রোগ ধরা পড়লে এবং কড়া নজরে রাখলে বেশিরভাগ ডেঙ্গি রোগীই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে মূল বিষয়টা হল – প্রতিকারের তুলনায় প্রতিরোধ ভাল। আসলে ডেঙ্গি রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা টিকা অথবা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা এখনও আবিষ্কার হয়নি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, এক্ষেত্রে প্রতিরোধই শেষ কথা। তাই মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। সেই কারণে কড়া সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। রোগ প্রতিরোধ করার জন্য রিপেলেন্ট ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে হাত-পা ঢাকা পোশাক পরা উচিত। এর পাশাপাশি নিজের বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা বাধ্যতামূলক। বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে কোথাও জল জমে রয়েছে কি না, সেদিকে নজর দিতে হবে। ঘরের জানলায় মশা-প্রতিরোধী জাল ব্যবহার করা যেতে হবে। এছাড়া ঘুমোনোর সময় মশারি টাঙানো উচিত।
এখানেই শেষ নয়, যদি জ্বর আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি দেহে যদি ডেঙ্গির অন্যান্য উপসর্গও প্রকট হয়ে ওঠে, তাহলে বিষয়টিকে ফেলে না রেখে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে যে, এই তৎপরতাই জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।