বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রায় মদ্যপান (Alcohol Consumption) খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভুললে চলবে না যে, অ্যালকোহল সেবন করলে ক্রনিক লিভারের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। এমনকী, লিভার বিকল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল মদ্যপানের জেরে হওয়া রোগ (Alcohol Related Liver Disease) বা এআরএলডি (ARLD)। বছরের পর বছর ধরে অ্যালকোহল সেবন করে গেলে লিভার বেড়ে যায় এবং প্রদাহ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জেরে লিভারে ক্ষত তৈরি হতে থাকে। যা সিরোসিস (Cirrhosis) নামে পরিচিত। আর এটাকেই লিভারের রোগের চূড়ান্ত পর্যায় বলে গণ্য করা হয়।
advertisement
আরও পড়ুন- অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক, হাসপাতালে ভেন্টিলেটরেই রাজু শ্রীবাস্তব
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, অ্যালকোহলের পরিমাণ সম্পর্কে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ কতটা পরিমাণে মদ্যপান করতে হবে, সেটা বোঝা বাঞ্ছনীয়। শুধু তা-ই নয়, কত দিন পর পর মদ্যপান করা হচ্ছে, এটার উপরও লিভারের ক্ষতির সম্ভাবনা নির্ভর করে।
ড্রিঙ্কওয়্যার (Drinkware) অনুযায়ী, যদি প্রতিদিন ৪০ গ্রামের বেশি বা চার ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল সেবন করা হয়, তা-হলে ৯০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এআরএলডি বা অ্যালকোহলজনিত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে। ওই সংগঠনের মতে, এই পরিমাণটা হল দুটি মাঝারি (১৭৫ মিলিলিটার) গ্লাসের ১২ শতাংশ এবিভি (অ্যালকোহল বাই ভলিউম) ওয়াইন অথবা রেগুলার স্ট্রেংথ বিয়ার (৪ শতাংশ এবিভি)-এর ২ পয়েন্ট কম।
লিভারের সব ক্রিয়াকলাপের মধ্যে অন্যতম হল এটি অ্যালকোহলের মতো বিষাক্ত পদার্থের (Toxic Elements) পরিমাণ হ্রাস করে। যখন কেউ মদ্যপান করেন, তখন লিভারে থাকা বিভিন্ন উৎসেচক সেই অ্যালকোহলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করে। সেই সঙ্গে আমাদের শরীর থেকে সেটাকে বার করে দিতে সাহায্যও করে থাকে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এর জেরে লিভারে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটও জমতে শুরু করে। আর সেই সঙ্গে প্রদাহ শুরু হয় এবং লিভারের কলাকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন- পাতে তেজপাতা পড়লে ফেলে দেন, না করাই ভাল, কেন জানলে অবাক হবেন!
লিভারের পুনর্জন্ম সম্ভব। আসলে প্রতি সময় অ্যালকোহল ফিল্টার করতে গিয়ে কিছু লিভারের কলাকোষ একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। লিভার নতুন কোষ পুনরায় গঠন করতে পারে। কিন্তু মারাত্মক হারে অ্যালকোহল সেবন করলে লিভারের পুনর্গঠনের ক্ষমতা হারিয়ে যায়। যার ফলে লিভার তীব্র ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, এমনকী লিভার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। যদি অ্যালকোহল সেবনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া যায় কিংবা পুরোপুরি এই অভ্যেস ত্যাগ করা যায়, তা-হলে ক্ষতির আশঙ্কা কমে যায়। আর রোগও বাড়তে পারে না।
অ্যালকোহল সেবন ছাড়াও অ্যালকোহল সম্পর্কিত লিভার ডিজিজের আরও অনেক কারণ থাকে। অতিরিক্ত ওজন কিংবা ওবেসিটি (Obesity), হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)-এর মতো আগে থেকেই থাকা লিভারের কোনও সমস্যা কিন্তু এই রোগের ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ। আর একটা জরুরি বিষয় হল, অ্যালকোহল সেবন করলে তার ক্ষতিকর প্রভাব পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরের উপরেই বেশি পড়ে। এ-ছাড়া মদ্যপানের এবং সেই সংক্রান্ত সমস্যা বা রোগের ধারা বহু ক্ষেত্রেই বংশপরম্পরায় পরিবারের এক জনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে চালিত হয়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, লিভারের রোগের ক্ষেত্রে জেনেটিক্স বা জিনঘটিত কারণও অনেকাংশে দায়ী।
লিভার যতক্ষণ না মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এআরএলডি-র কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আর এই কারণেই রোজকার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি লিভার ড্যামেজের জন্য প্রতিরোধমূলক স্ক্রিনিং টেস্টও করাতে হবে। এটা বিশেষ করে তাঁদেরকেই করাতে হবে, যাঁরা রোজ অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি (CBC)-সহ প্রাথমিক সমস্ত স্ক্রিনিং টেস্ট করানো উচিত। এ-ছাড়াও লিভারে সমস্যা আছে কি না, তা দেখার জন্য লিভার এনজাইম টেস্ট-সহ লিভার ফাংশন টেস্ট, অ্যাবডমিনাল কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি বা সিটি (CT) স্ক্যান, অ্যাবডমিনাল আল্ট্রাসাউন্ড এবং লিভার বায়োপ্সি করানো উচিত।
যদি রোগের শেষ পর্যায়ে গিয়ে উপসর্গ প্রকাশ পায়, তা-হলে হয় তো দেখা যাবে লিভার বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে পেটের উপরের ডান দিকে অস্বস্তি শুরু হয়ে যাবে। এআরএলডি-র উপসর্গগুলির মধ্যে অন্যতম হল অবসন্ন ভাব, আচমকাই ওজন কমে যাওয়া, খিদের অভাব, গা-বমি ভাব, বমি হওয়া ইত্যাদি। আবার অনেক সময় চোখ এবং ত্বকের রঙে হলদেটে ভাব, এমনকী গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এ-ছাড়াও লিভার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে বিভ্রান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এবং বমি ও মলের সঙ্গে রক্ত পড়ার মতো উপসর্গও প্রকাশ পায়।