রাজ্য রাজনীতির এই তরজা থেকে যদি দৃষ্টি ফিরিয়ে জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় তাকান, সেখানেও একই অর্কেষ্ট্রা বাজছে। চিত্রনাট্য একই। বদল শুধু নট আর নটীতে। ঠিক ২ দিন আগে মহারাষ্ট্রে শরদ পাওয়ারকে পাশে নিয়ে ইউপিএ-কে 'অস্তিত্বহীন' বলে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর, সেদিনই 'জাগো বাংলা' নিশানা করেছিল কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি ও সংসদে বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে।
advertisement
কিন্তু কেন? যে বাম, কংগ্রেসকে 'দূরবীন' দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না বলে অহরহ যারা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে, সেই তণমূলের মুখপত্রে ঠিক কলকাতা পুরভোটের মুখে এভাবে কটাক্ষ করতে হল কেন? রাজনীতির কারবারিরা এই প্রশ্নে একমত হতে পারছে না। তবে, রসিক বাঙালি বলছে, 'জাগো বাংলা' কি বাম, কংগ্রেসকে 'জাগাতে' চাইছে? না কি এখানেও সেই বাঁদরের পিঠে ভাগের গল্পের মতো বিরোধী ভোট ভাগ করার খেলা।
বিজেপি বলছে, এর মধ্যে নতুন আর কী আছে? এরা তো নবান্নে ফিসফ্রাই পলিটিক্স করা পার্টি। তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ করতেই এদের 'আক্রমণ' করে বেড়ালকে বাঘ বানাতে চাইছে। যদিও, সিপিএম বা কংগ্রেস, বিজেপির হুঁকোয় তামাক খেতে নারাজ। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি,
''এটা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। গোটা দেশজুড়ে কংগ্রেসকে দূর্বল করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেকে ও তাঁর পরিবারকে মোদি-বিজেপির হাত থেকে বাঁচতে চাইছেন, এটা সেই বৃহত্তর চক্রান্তেরই অঙ্গ।''
যদিও, অভিযোগের আঙুল যার দিকে সেই তৃণমূলের দাবি, মমতা চেয়েছিলেন বিজেপিকে উৎখাত করতে হলে বিরোধীদলগুলির যেখানে যার শক্তি, তাকে লড়তে দিতে হবে। ওই জায়গায় বাকিরা তাকে সমর্থন দেবে। তা না হলে বিজেপির মত শক্তিকে উচ্ছেদ করা যাবে না। মমতার সেই শর্ত তো কংগ্রেস এ রাজ্যেই মানেনি। বামেদের সঙ্গে জোট করে তৃণমূলের বিরোধিতা করেছে। তৃণমূল কি চিরকাল আঞ্চলিক দল হয়ে থাকবে, এমন দাসখৎ লিখে দিয়েছে বাকিদের কাছে? একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে তার দলের প্রসার ও জাতীয় পার্টি হওয়ার চেষ্টার মধ্যে দোষটা কোথায়?
আরও পড়ুন: গোয়ায় তৃণমূলের মুখ কে? মমতা-অভিষেকের সফরে বড় চমকের সম্ভাবনা!
সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, ''সিপিএম-কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তার দল এমনি গালি দেয় না। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দল বিলক্ষণ জানেন, কলকাতা পুরভোটে সব ওয়ার্ডে না হলেও, কিছু এলাকায় বামেরা এখনও তাকে দুঃশ্চিন্তায় রেখেছে। সেই কারণেই সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটে এত বিপুল জয় পাবার পর, খোদ কলকাতা পুরভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের প্রার্থীদের জেতাতে যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বেহালার মত বামপন্থী এলাকায় সভা করতে হচ্ছে। আসলে মমতা বন্দোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল জানে, বামপন্থার কোন বিকল্প নেই। আজ হোক বা কাল মানুষ বামপন্থার কাছেই ফিরবে।"
আরও পড়ুন: অভিষেকের সুচারু পরিকল্পনা, এবার পুরভোটে যে স্ট্র্যাটেজিতে 'খেলবে' তৃণমূল...
১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরভোট আর ২০২৪-এ দিল্লির তখৎ-এর লড়াইকে রাতের আকাশের মত মেলে ধরে যারা দূরবীন তাক করে বসে আছেন, সেই পুর-জ্যোতির্বিদরা চুপিসাড়ে বলছেন, "তরজা কিন্তু জমে উঠেছে।" এমনিতেই প্রবাদ আছে, বাঙালি খেতে না পেলে তত কষ্ট পায় না, যতটা ভোট আর রাজনীতি নিয়ে মশগুল হতে না পারলে পায়। ফলে, পুরভোটকে নিয়ে রঙ্গপ্রিয় বাঙালির জীবনে আগামী ক'দিন কূ-নাট্য, সু- নাট্য সবই চলবে পুরোদমে।