বিজেপির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেলে রাজভবন থেকে প্রকাশিত প্রেস রিলিজে উপাচার্য বদল থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা- নানা ইস্যুতে রাজ্যের বিরোধীতা করার পর থেকেই রাজ্যপালকে নিশানা করতে শুরু করে তৃণমূল। সম্প্রতি, দিনহাটায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের ওপর হামলার জেরে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কড়া বার্তা দিয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের থেকে রিপোর্ট তলব করেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের এই মনোভাবকে যখন আতস কাঁচের তলায় রেখে পাল্টা তোপ দাগতে শুরু করেছে তৃণমূল, তখন আজ বিধানসভায় অধ্যক্ষ্য বিমান বন্দোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল অন্য সুর।
advertisement
আজ বিধানসভায় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এর প্রসঙ্গে বিমান বলেন, রাজ্যপালের মধ্যে আমি কোনও পরিবর্তন দেখছি না। রাজ্যপালের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধই নেই। উনি রাজ্যপাল। সাংবিধানিক পদে আছেন। সংবিধান মেনেই কাজ করবেন। এটাই প্রত্যাশিত। এর বাইরে আমাদের কোনও প্রত্যাশা থাকার কথা নয়। রাজ্য সরকার সংবিধান মেনে কাজ করবে। রাজভবনও সংবিধান মানবে। এটাই প্রত্যাশিত।
সম্প্রতি, তৃণমূলের মুখপাত্র জাগো বাংলায় রাজ্যপাল আনন্দ বোসের সমালোচনা করে বলা হয়, বিজেপির গোপন অ্যাজেন্ডা পূর্ণ করার যে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছিলেন জগদীপ ধনকড়, বর্তমান রাজ্যপাল তাঁকেই দ্রুত অনুসরণ করতে শুরু করেছেন। জাগো বাংলায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দাগা নিয়েও আজ স্পিকারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'কোথায় কে, কী মন্তব্য করছেন, সেটা তার জানার বিষয় নয়। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।"
দিনহাটার ঘটনায় রাজ্য সরকারের কাছে রাজ্যপালের রিপোর্ট তলব করার মধ্যেও কোনও ভুল দেখছেন না স্পিকার। দিনহাটা কাণ্ডে রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে রাজ্যপালের রিপোর্ট চাওয়াকে কার্যত সমর্থন করে স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্যপাল হোম ডিপার্টমেন্টের কাছে রিপোর্ট চাইতেই পারেন। এটা ওঁর এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে।"
যদিও, এই ঘটনায় তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল শুধু নিশীথ প্রমাণিকের কথা শুনেই গোপন তদন্ত শেষ করলেন? রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য কেন শুনলেন না? বি এস এফ-এর গুলিতে রাজবংশী যুবকের মৃত্যু বা ধর্ষণে যুক্ত বিএসএফ জওয়ানকে নিয়ে কোন বক্তব্য নেই কেন? এই আবহেই অধ্যক্ষ্য বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সম্প্রতি, বিধায়ক নওশাদের জামিন না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও, দু'দিন পরেই সেই বিতর্কে ইতি টেনে স্পিকার জানিয়ে দেন, নওশাদের বিষয়ে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। এরপরেই, বিধায়কের পাশে না দাঁড়ানো নিয়ে আজ যেমন নওশাদ সরসরি স্পিকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন,তেমনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ''শুনলাম দিদি নাকি বকেছে।"
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যপালকে সমর্থন করে আজকের এই মন্তব্যের পর ফের সেই পুরনো বিতর্ককেই উস্কে দিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পিকারের এই মন্তব্যের দল কী ভাবে গ্রহণ করবে সেটাই এখন দেখার।