রাজনীতির স্বাভাবিক শর্ত মেনে দু'পক্ষই বলছে, এ সাক্ষাৎ নিতান্তই সৌজন্যমূলক। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতায় এক বাড়িতে হওয়া এই বৈঠকের যা নির্যাস বেরিয়ে আসছে, তাতে ফের আলোচনায় উঠে আসতে চলেছে দারুণ কোনও চমক। রূপা বরাবর কট্টর তৃণমূল বিরোধী ভূমিকা নিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতারাও জানেন, রূপা যেন দলের মূল স্রোত থেকে বেশ কিছুটা বিচ্ছিন্ন। আর তাই সাংসদ পদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন তিনি কী করবেন, তা নিয়ে নিশ্চিত নন রাজ্য বিজেপির নেতারাও। অন্তত দলের বেশ কিছু সূত্রের এমনই দাবি।
advertisement
আরও পড়ুন: রাতে পাঁচিল টপকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যুবক, বড়সড় পদক্ষেপ এবার! অভিযুক্তেরও আজব দাবি
আর ঠিক এমনই এক মুহূর্তে তৃণমূল মুখপাত্র কুণালের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণের 'সৌজন্য' বিনিময় রূপার। এর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া রাজীব গঙ্গোপাধ্যায় যখন 'ঘর ওয়াপসি'র আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বারবার গন্তব্য হয়েছে কুণাল ঘোষের বাড়ি। সেই সময়ও প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল সৌজন্য সাক্ষাতের ফুলের সাজি। কিছুদিন পর অবশ্য ত্রিপুরা গিয়ে সেই রাজীবই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফিরে আসেন 'নিজের ঘরে'। দলের অন্দরের ইতিউতি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সামলে রাজীব এখন পুরোদস্তুর সেই তৃণমূল নেতা।
আরও পড়ুন: হঠাৎ করেই প্রবলভাবে করোনার থাবা, উত্তরের এই জেলা এখন আতঙ্কে কাঁপছে
কিন্তু রূপা! তিনি তো বিজেপির 'ঘরের মেয়ে'। রাজ্যে তিনি যতটা সাবলীল থেকেছেন, অনেক বেশি সক্রিয় থেকেছেন দিল্লিতে। তাই রাজ্যসভার সাংসদ পদ রূপা পেয়েছিলেন অনেকটাই সহজে। সেই সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে সদ্য। আর ঠিক সেখানেই ঢুকে পড়েছে মিঠুন চক্রবর্তীর নাম। দীর্ঘদিন পর কলকাতায় পা রেখেই মিঠুন পৌঁছে গিয়েছেন মুরলীধর সেন লেনে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পাশে বসেই বলেছেন, ''আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছে। আমার একটা লক্ষ্য আছে। একবার রাজ্যসভা, একবার লোকসভা এভাবে আমি কাজ করি না। আমি রাজনীতি নয়, মানুষ নীতিতে বিশ্বাসী।'' বলছেন অনেক কথাই, কিন্তু মিঠুনের আকার-ইঙ্গিত দেখে রাজনৈতিক মহল বলছে, গুঞ্জন সত্যি হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে আর না 'ফিরিয়ে' এবার 'এক ছোবলেই ছবি'র 'চনমনে' মিঠুনে আস্থা রাখতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন: ২০২৪-এর আগেই 'সেই' প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে BJP, সুকান্তর দাবিতে তুমুল শোরগোল বঙ্গে
কিন্তু কী আশ্চর্য সমাপতন! সোমবার যে রূপার নাম ধীরেধীরে নিষ্প্রভ হতে শুরু করেছিল, মঙ্গলেই আবার তিনি উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন। এবারও সেই এক বৈঠক। আর সেই বৈঠকের এক প্রান্তে বসে থাকা মানুষটার নাম কুণাল ঘোষ বলেই হয়ত রাজনীতির মাঠে ঝড় উঠেছে, রূপা কি তবে এবার তৃণমূলে? আপাতত এই দাবি নস্যাৎ করার পালা। কিন্তু বিষয়টা যখন রাজনীতি, তাও আবার এমন একটা তাৎপর্যপূর্ণ সময়, ফলে ঝড়ের গতি আরও বাড়ছে। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, আগামী কয়েকদিন শুধু রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী'ই নন, একসময়ের পর্দার দ্রৌপদীও আলোচনার আলো ছিনিয়ে নিতে পারে। বৈঠক শেষ হয়ে গিয়েছে, আস্তিন গুটিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গ রাজনীতি।