মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। মা ও ৫ বোনের সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্র। জেঠু তাঁকে নিয়ে যান নিজের বাড়িতে। সেখানেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। ফের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজে তাঁর হাতেখড়ি। এক বান্ধবী সেলাইয়ের কাজের অর্ডার পেতেন। তাঁর সুত্র ধরেই পীতাম্বরি নামে একটি সংস্থা তাঁকে সেলাইয়ের কাজ দেন।
advertisement
এর মধ্যেই তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। সিটি কলেজে ভর্তিও হন। তবে সন্তানসম্ভবা হয়ে যাওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয় সেখানেই। কিন্তু থামেনি সেলাইয়ের কাজ। ১৯৮৯ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নক্সীকাঁথার কাজের অর্ডার আসে। তাঁর হাতের কাজে সকলে এতই মুগ্ধ হয়ে যান যান যে পরের বছরই নক্সীকাঁথার কাজ শেখানোর একটি বিভাগ খোলা হয়। যার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রীতিকণাকে।
২০০১ সালে তিনি তাঁর কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কার পান। এর আগে তাঁর কাকা পণ্ডিত নিখিল ঘোষ সঙ্গীতের জন্য পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন। প্রীতিকণা নিজে যা শিখেছেন, অন্যদের মধ্যে বিলিয়েও দিয়েছেন। কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই প্রশিক্ষণ দেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিদেশেও তাঁর কাজের চর্চা রয়েছে। প্রশিক্ষণ দিতে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন তিনি।
একা এক নারীর জীবিকা আজ ঐতিহ্যবাহী কাঁথার কাজকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। পদ্মশ্রীতে সম্মানিত হলেন সেই প্রীতিকণা।
আরও পড়ুন: থাকবেন মমতা, ডাক শুভেন্দুকেও! রাজভবনে আজ হাতেখড়ি, বাংলা শিখবেন রাজ্যপাল
বাগদেবীর আরাধনার আগের দিন ঘোষিত এই ভূষণ-তালিকায় আছেন আরও কৃতী বঙ্গসন্তান৷ শিক্ষাক্ষেত্রে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন ধনীরাম টোটো৷ মৃতপ্রায় ভাষা টোটো বা ডেঙ্কাকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য তাঁকে এই সম্মানে সম্মানিত করা হবে৷ টোটোর মতো বিলুপ্তপ্রায় ভাষার পাশাপাশি জলপাইগুড়ি থেকে এ বারের পদ্মসম্মানে আলোকিত হতে চলেছেন মঙ্গলাকান্তি রায়৷ তিনি এই মুহূর্তে বাংলার প্রবীণতম লোকশিল্পী৷ ১০২ বছর বয়সি মঙ্গলাকান্তি সারিন্দা বাজিয়ে চেনা পাখির কলতানের বোল ফুটিয়ে তোলেন৷ তিনিও সম্মানিত হবেন পদ্মশ্রীতে৷
অর্পণ মণ্ডল