তবে একসাথে রাজনীতি করতে আর রাজি নন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এক সময়ের আস্থাভাজন। গত সোমবার, ২৫ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গরহাজির ছিলেন প্রবীর। পরের দিন ২৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার জেলায় দলের মুখপাত্র ও কোর কমিটির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা প্রবীর ঘোষাল। তাহলে কি দল ছাড়ছেন তিনি? জল্পনা জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। অবশেষে শনিবার নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলেন, বললেন, "প্রচন্ড একটা অস্বস্তি হচ্ছে এটা ঠিক। তবে তৃণমূল কংগ্রেসটা আর করা যায় না। তাই বিজেপিতে যোগ দিলাম।"
advertisement
লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফল হয় হুগলি জেলায়। দলের খারাপ ফলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একাংশের খারাপ আচরণকে দায়ী করেছিলেন প্রবীর ঘোষাল। যাদেরকে দলের মধ্যে তিনি পচা মুখ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তার পর থেকেই দলের একাংশের সঙ্গে তাঁর দুরত্ব তৈরি হয়। সেই দুরত্ব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, যে প্রবীর ঘোষাল বলছেন, "একটা চক্র কাজ করছে আমাকে হারানোর জন্য। এটা একটা শক্তিশালী চক্র। সামনে এগোতে না দেওয়ার একটা চক্র কাজ করছে।" এরপরেই প্রবীর ঘোষাল দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। "লোকসভায় আমাদের খারাপ ফল হয়েছে। আমি দলে শুদ্ধিকরণের কথা বলেছিলাম। আমি এখনও মনে করি আমি ঠিক বলেছিলাম।"
১৯৮২ সাল থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সাথে সম্পর্ক মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। সাংবাদিক প্রবীর ঘোষালকে উত্তরপাড়ায় ২০১৬ সালে টিকিট দেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখান থেকে জিতে বিধায়ক হন তিনি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে তার সম্পর্ক ভালো। তার পরেও তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কেন কিছু জানালেন না? প্রবীরবাবু এদিনও জানিয়েছেন, "আমি জানিয়েছি। যেদিন লক্ষীরতন শুক্লা ইস্তফা দেয়, সেদিন আমার সাথে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়। আমি সমস্যার কথা বলি। আমাকে অন্যত্র ভোটে দাঁড়ানোর কথা বলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। আমি ভূমিপুত্র তাই অন্য কোথাও দাঁড়াতে রাজি হইনি। আমি ভোটে দাঁড়ালে উত্তরপাড়া থেকেই দাঁড়াব।" মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এক সময়ের আস্থাভাজনের গলায় অবশ্য আজ ছিল অমিত স্তুতি। প্রবীর ঘোষাল জানিয়েছেন, "আমাদের কাছে এটা অত্যন্ত সম্মানের ব্যাপার যে অমিত শাহ বিশেষ বিমান পাঠিয়ে আমাদের দিল্লি নিয়ে যাচ্ছেন। তার উপস্থিতি তেই যোগদান করব বিজেপিতে। আগামী দিনে বিজেপির হয়ে মানুষের জন্যে কাজ করতে চাই।"
তবে কি কাজ করবেন সেখানে? শুধু বলেছেন ভবিষ্যৎ সব উত্তর দেবে। জেলার কাজ নিয়ে যে তিনি অখুশি। তা গোপন রাখেননি তিনি। বিশেষ করে কলেজের বিষয়ে সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ের নাক গলানো। তার রাস্তা ঠিক না করা। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী বলার পরেও কলেজের পরিচালন সমিতি খর্ব করে দেওয়ার অভিযোগ তিনি করছেন। এই অবস্থায় তার বক্তব্য, "এই পরিস্থিতি অভিপ্রেত ছিল না। আমি বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু এলাকার বিধায়কের কাজ আছে। জনগণের জন্যে তাকে কাজ করতে হয়।" তবে তিনি জানিয়েছেন, দলের মধ্যে আমি ব্রাত্য হয়ে গেছিলাম। তাই অস্বস্তি না বাড়িয়ে বিজেপিতে যোগদান করলেন প্রবীর ঘোষাল।
