এখানেই ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, কেমিকেল কারখানা ও পাশেই গেঞ্জি কারখানা, দুটিতেই দাহ্য বস্তু রয়েছে, তা সত্ত্বেও সঠিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না কেন? যেখানে কারখানা এলাকা সেখানে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়, কেন সংকীর্ণ গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কারখানা?কারখানা থাকলে ঢোকা ও বেরোনোর জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত। অথচ দু'টো কারখানা দুটিতেও সেই ব্যবস্থা নেই কেন? পিছনে কোনও গেট কেন নেই? যেখানে আগুন লাগল তার পিছন দিকে বার হওয়ার কেন ব্যবস্থা নেই? পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এই কারখানাগুলি নিয়ম না মেনে চলছিল? পিছনেই বিমানবন্দরের একটি অংশ। আগুন সেখানে ছড়ালে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটত। কী করে গজিয়ে উঠল এই কারখানাগুলি? ধারেকাছে কোনও জলের ব্যবস্থা নেই, সরু গলি যার জন্য দমকল ঢুকতে বেগ পেতে হয়. কিন্তু কেন এই প্রতিকূল পরিবেশে কারখানা গড়ে উঠল? কোথায় নজরদারি? প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহল মহলের এক অংশ।
advertisement
আরও পড়ুন - রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার ক্যাম্প স্থগিত, স্থগিত স্টুডেন্ট উইক-এর অনুষ্ঠান
শনিবার সকাল এগারোটা নাগাদ হঠাৎই আগুন লাগে কেমিকেল কারখানায়। সে সময় আটকে পড়েন দু'তিন জন। তাদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশী রাজু সাঁতরা বাঁচাতে আসেন। রাজু জানান, "কেমিকেল ফ্যাক্টরির ভিতরে দু'তিন জন আটকে ছিলেন। বাকিদের বার করে আনা সম্ভব হলেও কানাই নামে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে বার করে আনা সম্ভব হয়নি। বয়স্ক ব্যক্তি তাঁকে বার করার আগেই কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণ। সামনের লাইট পোস্ট ও পাশের গেঞ্জির কারখানা দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে। উনি চিৎকার করলেও সম্ভব হয়নি বাঁচানো।"
আরও পড়ুন - করোনা আক্রান্ত রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ভর্তি হাসপাতালে
কেমিকেল ফ্যাক্টরি থেকে আগুন নিমেষে ছড়িয়ে পরে গেঞ্জি কারখানায়। দমকলের আঠারোটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় সাড়ে তিন-ঘন্টা অর্থাৎ দুপুর আড়াইটে নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায় গেঞ্জি কারখানা এক তলা ও দো-তালা রাখা সব জিনিসপত্র, গেঞ্জি বান্ডিল, মেশিন পত্র, এমনকী মোটরসাইকেলও পুড়ে কঙ্কালসার হয়ে যায়। কেমিকেল ফ্যাক্টরিও পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। দমকল কর্মীদের সরু গলিতে দমকলের গাড়ি ঢোকাতে ও জল আনতে বেগ পেতে হয়। গেঞ্জি কারখানার ভিতরে দোতালা ও একতলায় আগুনের লেলিহান শিখায় ভিতরে ঢোকার সম্ভব হয়নি।
ডাকা হয় এনডিআরএফকে। গেঞ্জি কারখানা ছাদে আসবেস্টাসর উপর ল্যাডার দিয়ে ওঠে। এর পর ছাদের শেড ভেঙে জলের পাইপ ঢুকিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। পাশের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতেও আগুনে সমস্ত জিনিস পুড়ে যায়। রাসায়নিক থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার ভয় ছিল। পিছনে এয়ারপোর্টর একটি অংশ। সেখানে আগুন যাতে না ছড়ায় দ্রুত দমকলের সংখ্যা বাড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন দমকলকর্মীর। ঘটনাস্থলে আসেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও বিধায়ক অদিতি মুন্সী। সুজিত বসু জানান, "আগুন ১৮টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রনে এসেছে। কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি ও গেঞ্জি কারখানা দুটোতে আগুন লাগে, ফলে ভস্মিভূত হয়ে গেছে। সরু গলি হওয়াতে দমকলের গাড়ি ঢোকাতে অসুবিধা হয়েছে।" আগুন নিয়ন্ত্রণের আসার পর পোড়া জিনিসপত্র উদারের চেষ্টা করে কর্মীরা। প্রায় ছয় ঘন্টা পর কেমিকেল ফ্যাক্টরিতে আটকে থাকা নিরাপত্তারক্ষীর দেহ উদ্ধার করে এনডিআরএফ ও দমকলকর্মীরা।
ARPITA HAZRA