আয়না মানুষ। এ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সজারুর কাঁটা গল্পের মতো অনেকের হার্ট বাম দিকের পরিবর্তে ডান দিকে থাকে। কিন্তু তাই বলে হার্ট, লিভার, গলব্লাডার, অ্যাপেন্ডিক্স, স্প্লিন বা প্লীহা, স্টমাক সবই বিপরীত দিকে। কসবার বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার কর্মী অপূর্ব কুমার গোস্বামীর ৪ বছর বয়সে ধরা পড়ে হার্ট বিপরীত দিকে। তারপর তাঁর জীবন স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছিল। হটাৎ করেই গত ৭,৮ মাস ধরে পেটে যন্ত্রণা শুরু হলে স্থানীয় চিকিৎসকরা দেখে বেশিরভাগ সময়ই মাসল পেনের ওষুধ দিয়ে তা কমাতো।
advertisement
আরও পড়ুন: রাজ্য সেকেন্ডারি এডুকেশন সার্ভিস সিলেকশনে ৩৫৩৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, জানুন
গত এক মাস আগে অসহ্য পেটে যন্ত্রণা, জ্বর হওয়ায় স্ত্রীর পরামর্শে মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই তাঁর শরীরের ব্যতিক্রমী কথা জানতে পারেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় 'সাইটাস ইনভারসাস টোটালিস '। শরীরের সব অঙ্গ বিপরীত দিকে হয়। হার্ট, লিভার, ফুসফুস, অ্যাপেন্ডিক্স, গলব্লাডার সবই উল্টোদিকে থাকে। চিকিৎসকরা এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলানজিও প্যানক্রিয়াটোগ্রাফি বা ই আর সি পি পরীক্ষার মাধ্যমে ধরেনএই পরিস্থিতি। কুড়ি হাজার জনে একজনের এই রকম পরিস্থিতি হয়। দেরি করে ধরা পড়লে চিকিৎসার সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন: কোর্টের কথা শুনলেন মন্ত্রী কন্যা অঙ্কিতা, প্রথম কিস্তির প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ফেরত! আর বাকি কত?
আমরি হাসপাতালের জেনারেল সার্জেন সুসেন জিত প্রসাদ মাহাতো জানান, " অনেক দেরি হওয়ায় অপূর্ব গোস্বামীর গলব্লাডারে পুঁজ জমে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা সাধারনতঃ ডান হাতি হওয়ায় রোগীর অস্ত্রোপচার করা সমস্যার হয়, তবে ২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে গলব্লাডারে পাথর থেকে জন্ডিস হয়ে যাওয়ার পর সফলভাবে স্টেন বসিয়ে সুস্থ করে তোলা গেছে অপূর্ব গোস্বামীকে। অন্যদিকে, গাস্ট্রো এন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডক্টর গৌতম দাস জানান, " আমার দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনে এই রকম কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করি নি। বিভিন্ন জার্নালে এই ধরণের রোগীর চিকিৎসার খবর পড়েছি,কিন্তু আমি যখন ই আর সি পি পরীক্ষা করে এই পরিস্থিতি দেখি,তখন সত্যিই চমকে যাই। তবে এই অস্ত্রোপচারের পর অপূর্ব গোস্বামীকে সুস্থ করে তুলে সত্যিই তৃপ্তি পেয়েছি।"
তবে ৩৪ বছর বয়সে পৌঁছে এই রকম অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হবে তা ভাবতে পারেননি অপূর্ব গোস্বামী। এটাকে ঈশ্বরের দান বলে শিহরিত অপূর্ব সুস্থ হয়ে সব কৃতিত্ব চিকিৎসকদের দিচ্ছেন। অপূর্ব কুমার গোস্বামী জানাচ্ছেন, " আমার স্ত্রী অমৃতা পেটে ব্যথা হওয়ার পর যেভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসে, তাতেই প্রথম ধরা পড়ল আমার শরীরের এই অবস্থা। কিন্তু এই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা আমি কোনওদিনই ভুলব না।"
চিকিৎসকরা বলছেন, বুকে একটা আই কার্ড লাগিয়ে ঘুরতে হবে মিরর ম্যানকে। যেখানে লেখা থাকবে সব অঙ্গ উল্টোদিকে। যাতে আগামীদিনে রাস্তাঘাটে হঠাৎ করে অসুস্থ হলে চিকিৎসক বা হাসপাতালে গেলে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয়।