TRENDING:

লকডাউনে ওষুধ পাড়ায় হাহাকার! সরকারি হস্তক্ষেপের আর্জি, উদ্বেগে গ্রাহকরা

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
VENKATESWAR  LAHIRI
advertisement

#কলকাতা:  লকডাউনের জের। আগামী সোমবার থেকে রাজ্যজুড়ে আকাল দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ওষুধ শিল্পে। কলকাতার পাইকারি বা  হোলসেল মার্কেট হিসেবে পরিচিত মেহেতা বিল্ডিং, বাগরি মার্কেট, কলুতলা স্ট্রিট, গান্ধি বিল্ডিং । এই সমস্ত ওষুধের হোলসেল বাজার থেকে কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে খুচরো বাজারে প্রতিদিন কমপক্ষে দশ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ হয়। বর্তমানে  শুনশান ওষুধ পাড়া। এখানে ওষুধের  হোলসেল দোকানের সংখ্যা প্রায় ৬৫০ টি। লকডাউন পরিস্থিতির জেরে বর্তমানে মাত্র দু থেকে তিনটি দোকান খোলা রয়েছে। তাও সেখানে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই । এই তথ্যই প্রমাণ করে ওষুধ কারবারের বেহাল দশা।

advertisement

এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী সোমবার থেকে রাজ্যজুড়ে জীবনদায়ী ওষুধের পাশাপাশি তীব্র হাহাকার দেখা যাবে সাধারণ সমস্ত ওষুধের ক্ষেত্রেও। কয়েকজন খুচরো ওষুধ ব্যবসায়ীদের কথায়, 'আর মাত্র তিন থেকে সর্বোচ্চ চার দিন আমাদের কাছে যা ওষুধ মজুত আছে তা দিয়ে  গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো যাবে। রবিবারের মধ্যে যদি নতুন করে ওষুধ আমাদের কাছে এসে না পৌঁছয় তাহলে আমরা দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব। কেননা গ্রাহকদের যদি পরিষেবাই  না দিতে পারি তাহলে দোকান খুলে রেখে আর লাভ কী?'

advertisement

দক্ষিণ কলকাতার একটি ওষুধের দোকানের মালিক বললেন, ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে ওষুধ আসা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী যোগান অনেকটাই কমেছে। এই অবস্থায় বেশ কিছু ওষুধ আছে যেগুলি ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে স্টক শেষ হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণের পাশাপাশি উত্তর কলকাতা কিম্বা রাজ্যের সর্বত্র ওষুধের দোকান গুলোতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন চোখে পড়ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা গ্রাহকরা ওষুধ নেওয়ার জন্য লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ অনেকেই পাচ্ছেন না। এমনই একজন প্রবীণ নাগরিক সহদেব সরকার জানালেন, 'রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার কারণে আমাকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু যে পরিস্থিতি চলছে তাতে আগামী দিনে আমার জীবনদায়ী ওষুধ মিলবে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছি না। এই অবস্থায় অবিলম্বে সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। নচেৎ তীব্র সঙ্কটে পড়তে হবে আমার মত অনেককেই'। ক্রেতাদের একাংশের যুক্তি,  লকডাউনে ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও বারবার বেরোনোর উপায় নেই। তাই যে সমস্ত ওষুধ প্রতিদিন খাওয়ার প্রয়োজন সেগুলি একটু বেশি করেই কিনে রাখছি। ওষুধ বিক্রেতারাও জানিয়েছেন, অর্ডার দিলেও কিছু ওষুধ ডিষ্ট্রিবিউটারদের কাছ থেকে পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে ক্রেতারা প্রায় প্রত্যেকেই একসঙ্গে বেশি ওষুধ কেনায়।

advertisement

ওষুধের ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে  উদ্বেগ  আর উৎকন্ঠা ক্রমশ বাড়ছে।লকডাউনের কারণে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সে কথা ভেবে ওষুধ কেনার হিড়িক সর্বত্র। অনেক ক্রেতাই প্রায় এক মাসের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে রাখছেন । আবার এমন অনেক গ্রাহক আছেন যাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ জোগাড় করতে রীতিমত কালঘাম ছুটছে। সকালে ঝাঁপ খুলতেই  একের পর এক  ওষুধের দোকানের সামনে গ্রাহকদের লম্বা লাইন।  চাহিদা কয়েক গুন বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে সঙ্কট। বহু জীবনদায়ী ওষুধ বাজারে পেতে ইতিমধ্যেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে  রোগী তথা পরিবারের।ওষুধের পাইকারি বাজার খোলা থাকলেও সেখানেও কর্মীদের উপস্থিতি কার্যত শূন্য। অনেকেই যানবাহন না চলায় কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছেন না। অনেকে আবার করোনা মোকাবিলায় নিজের ইচ্ছেয় কিম্বা পরিবারের অন্যান্যদের পরামর্শে বাড়ির বাইরে পা দিচ্ছেন না।

advertisement

লক ডাউনের শুরুতেই যদি ওষুধের এই সমস্যা হয় তা হলে আগামী দিন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে উদ্বেগ তাই থেকেই যাচ্ছে।জীবনদায়ী ওষুধ না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন অনেকে। আবার প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ওষুধ খুঁজতে বেরিয়ে রাস্তায় পুলিশের নানান প্রশ্নেরও সামনে পড়তে হচ্ছে অনেককেই। ওষুধ ছাড়া কীভাবে দিন চলবে তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না  অনেকেই। অনেক রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। ওষুধ না মেলায় দুশ্চিন্তায় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কেন এই হাল? উত্তর খুঁজেছে নিউজ এইট্টিন বাংলা।

ফার্মাসিউটিক্যালস ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সম্পাদক জয়দীপ সরকার বলেন , 'আমাদের হোলসেল বাজারেও মাত্র দু-একদিনের মত মজুত আছে ওষুধ। তাও সব ধরণের ওষুধ নেই। বিমান এবং অন্যান্য পরিবহন মারফত আমাদের কাছে যে পদ্ধতিতে ওষুধ এসে পৌঁছয় তা নতুন করে আসা এই মুহূর্তে লকডাউনের  জেরে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে রয়েছে। হঠাৎ করে লকডাউনের  সময়সীমা বাড়ায় সমস্যা  বেড়েছে। শুনেছি  কোটি কোটি টাকার ওষুধ  বিমানবন্দর, বন্দর  বা বিভিন্ন জায়গায়  এসে আটকে পড়ে রয়েছে। সেই সমস্ত ওষুধ আমাদের কাছে এসে যতক্ষণ না পৌঁছচ্ছে ততক্ষণ আমাদের পক্ষে পরিষেবা দেওয়া  কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয় । সাংগঠনিকভাবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করা যায়। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের অ্যাসোসিয়েশন। এই ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যে পাঁচ হাজার  কর্মচারীরা যুক্ত তাঁরা নিজেদের জীবনের স্বার্থে আবার কেউ বা দূরদূরান্ত থেকে কর্মস্থলে হাজির হতে না পারার কারণে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

তাই সরকারের কাছে জয়দীপবাবুর মত অন্যান্য হোলসেল ওষুধ ব্যবসায়ীদের আর্জি, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সরকার বিশেষ করে যে সমস্ত ওষুধ বিভিন্ন পরিবহন মারফত এসে নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে পড়ে রয়েছে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক। অবিলম্বে যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে আগামী সোমবার থেকে  শুধু কলকাতা নয়,  রাজ্যজুড়ে ওষুধ  শিল্পেও লকডাউন দেখা যাবে --এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ী মহল। লকডাউনে জরুরী পরিষেবা হিসেবে প্রধান চিহ্নিত সামগ্রীর ক্ষেত্রেও  এই ছবি যে নিঃসন্দেহে উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কত দিনে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি? প্রশ্ন আছে, তবে উত্তর এখনও  অজানা ।

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
লকডাউনে ওষুধ পাড়ায় হাহাকার! সরকারি হস্তক্ষেপের আর্জি, উদ্বেগে গ্রাহকরা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল