গার্ডেনরিচ ডিভিশনে সম্পত্তি কর আদায়ের গতি নিয়ে ক্ষুদ্ধ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ওই অঞ্চলে কর আদায় অন্য ডিভিশনের থেকে কম হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে ধমক দিলেন মেয়র। আধিকারিকদের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র।
কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার এবং বিশেষ কমিশনার সোমনাথ দেকে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের বিভিন্ন ডিভিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করার নির্দেশ দেন মেয়র। আধিকারিকদের মিউটেশন-সহ কর আদায় সংক্রান্ত টার্গেট বেঁধে কাজ করতে বলা হয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: মমতার 'আশঙ্কাই' সত্যি হল! অভিষেককে ফের তলব ইডি-র, এবার কলকাতাতেই জেরা
পুরসভা সূত্রের খবর, সার্বিকভাবে সম্পত্তি কর আদায় বেড়েছে। গতবারের তুলনায় আনুমানিক ৮২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আয় বাড়াতে বকেয়া সম্পত্তি কর আদায়ে জোর দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। বকেয়া দীর্ঘ দিন ধরে থাকলে একাধিক সম্পত্তি সিল করা হচ্ছে। কর না দিলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করার মতো কঠিন পদক্ষেপও নিতে চলেছে। সোমবার সম্পত্তি কর বিভাগ নিয়ে বৈঠক করেন মেয়র। শহরে বড় বড় ইমারত তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিশেষ করে সংযুক্ত এলাকায় জনঘনত্ব বাড়ছে, অথচ পুরসভার কর আদায় ওই সমস্ত এলাকা থেকে সন্তোষজনক নয়। কেন এই পরিস্থিতি? সেই বৈঠকেই আধিকারিকদের কাছে জবাবদিহি চান তিনি।
আরও পড়ুন: 'কত পেলি? বলছে বন্ধুরা', পচা শরীর নিয়ে তৃণমূলকে সতর্কবার্তা সাংসদ জহরের! বাড়ল অস্বস্তি
পুরসভা সূত্রের খবর, কর আদায়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতা ও উত্তর কলকাতা। তুলনামূলকভাবে যাদবপুরেও বকেয়া কর আদায়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। সম্প্রতি একটি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় সরকারি সম্পত্তি থেকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ৩ কোটির ওপরে টাকা আদায় করেছে টলি ট্যাক্স ডিভিশন। সবাই এগোলেও গার্ডেনরিচ সেক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। ক্ষুদ্ধ মেয়র এদিন বৈঠকে ওই এলাকার সম্পত্তি কর বিভাগের আধিকারিককে ধমকও দেন বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে আগেও আধিকারিকদের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, গতবার যা ছিল তার থেকে ২০ শতাংশ বেশি কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এবার দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবর্ষ এপ্রিল থেকে অগাস্টের শেষ পর্যন্ত সম্পত্তি কর থেকে আদায় করা হয়েছিল ৪৩৭ কোটি টাকা। এবছর সেখানে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৫১৯ কোটি টাকা। প্রায় ৮২ কোটি টাকা বেশি। সম্পত্তি কর বিভাগের এক আধিকারিক জানান, কর আদায়ের মাত্রা আগের থেকে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গার্ডেনরিচ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় সেখানে আরও বেশি জোর দিতে বলা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, আগে সাড়ে আট লক্ষ সম্পত্তি করদাতা শহরের ছিলেন। গত কয়েক মাসের সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ ৮০ হাজার। শহরের কয়েকটি অঞ্চলে সম্পত্তি কর আদায়ের গতি আশানুরূপ নয়। গার্ডেনরিচ সার্কুলার রোড, পাহাড়পুর রোডে একাধিক বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কেন বেশি কর আদায় হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বৈঠকে। বাইপাস, বেহালা অঞ্চলের কথাও উঠে আসে এই আলোচনায়।
পুরসভার এই বৈঠকে মাঠে কাজ করতে গিয়ে কর্মী-আধিকারিকদের কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা জানতে চান ফিরহাদ হাকিম। প্রায় সকলেই মেয়রের কাছে লোকবলের অভাবের অভিযোগ জানান। প্রশাসনিক এবং আইনি জটিলতার বিষয়েও তাঁকে অবগত করেন। মেয়র নির্দেশ দেন, আইন মাফিক কাজ করা হোক। কোথাও কাজ করতে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। 'দুয়ারে পুরসভা' ক্যাম্প আরও বেশি করে করার পরামর্শ দেন মেয়র। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, নিয়মিত ক্যাম্প করে মাসিক রিপোর্ট দিন। টার্গেট নিয়ে সমস্ত মিউটেশন শেষ করতে বলেছেন তিনি।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, করদাতার সংখ্যা বেড়েছে শহরে, ৩০ হাজার নতুন সম্পত্তির মূল্যায়নও বেড়েছে। ডেপুটি অ্যাসেসার ও অ্যাসেসমেন্ট কালেকটারদের টার্গেট বেঁধে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিং বিভাগের সঙ্গে ভালো সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। নতুন বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন হলেই অ্যাসেসমেন্ট, মিউটেশনের দিকে নজর দিতে হবে।