এর আগেও একাধিক বার একাধিক সভামঞ্চ থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। কিন্তু, আজ, আলিপুরদুয়ারে তাঁর সুরটা যেন ছিল আরও কয়েক দাগ চড়া। অভিযোগের সুর পাল্টে এদিন যেন কেন্দ্রকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, "আমি দেখতে চাই কদিন এটা চলে। আমি ভিক্ষে করব না। আমি ভিক্ষে করার লোক নই।"
advertisement
আরও পড়ুন: ১০০ দিনের কাজ পর্যবেক্ষেণে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল, ১২ জেলায় পরিদর্শন
এদিনের প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকে মমতা বলেন, "আপনারা হয়ত দুঃখ পাবেন। কেন্দ্র আমাদের সব ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছে। ৬ হাজার কোটি টাকা আমরা পাই। ১০০ দিনের কাজে আমরা টাকা পাইনি। " মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ৪০ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ করিয়েছে। ১০ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। কিন্তু, তাদের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। সব টাকা রাজ্য মিটিয়েছে বলে জানান মমতা।
এর পরেই বিজেপির নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতা বলেন, "রাজ্যের টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছ। নেতারা এসে বলে সব দিল কে??? মাছের তেলে মাছ ভাজা। রাজ্য সরকার ট্যাক্স কালেকশন করে না। কেন্দ্র করে। করের ৬০ শতাংশ টাকা আমাদের দেওয়ার কথা। আমাদের টাকাই আমাদের দিচ্ছে না।"
এরপরেই মমতার হুঁশিয়ারি, "আমি দেখতে চাই কদিন এটা চলে। আমি ভিক্ষে করব না। আমি ভিক্ষে করার লোক নই।" তাঁর কথায়, "আমি ভিক্ষা চাইলে মা বোনদের কাছে চাইব, চাষি, শ্রমিক, যুব, কন্যাশ্রীদের কাছে চাইব।"
আরও পড়ুন: 'মিড ডে মিল'-এর টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সফর! ট্যুইটে বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর
কেন্দ্রের কাছে অনুদানের আশ্বাস নিয়ে গত বছরের শেষের দিক থেকেই রাজ্যে জোরকদমে শুরু হয়েছিল আবাস যোজনার কাজ। প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাইশের শেষে ১১ লক্ষ বাড়ি প্রাপকের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে নবান্ন। কিন্তু তার পরেই মাথায় ভেঙে পড়ে আকাশ। সম্প্রতি, কেন্দ্রের তরফে চিঠি দিয়ে নবান্নকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরনো হিসাব না পেলে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় নতুন করে টাকা ছাড়া যাবে না। এর খন কার্যত বিশ বাঁও জলে রাজ্যের আবাস প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।
এদিন আবাস নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। বলেন, "বাংলার বাড়ির টাকা দেয়নি। আমরা অভিযোগ পেয়ে ১৭ লক্ষ নাম বাদ দিয়েছি। ১১ লক্ষের বাড়ি তৈরি করা হবে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দেয়, আমরা বুঝে নেব। গ্রামীণ রাস্তার টাকা দিচ্ছে না। বন্যা হলেও টাকা দেয় না।"
আবাস থেকে ১০০ দিনের কাজ, কিংবা মিড ডে মিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প এখন কার্যত কেন্দ্রের রেডারে। রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ করার জন্য দফায় দফায় পশ্চিমবঙ্গে আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এদিন তা নিয়েও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী, "এখন একটা উইপোকা কামড়ালেও কেন্দ্রের দল পাঠায়। যখন বিএসএফ গুলি চালায় তখন কটা টিম পাঠায়?"
এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় সরকার OBC ছাত্রছাত্রীদের জন্য দেওয়া অনুদানের টাকাও বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, "১৭ শতাংশ obc আমরা রিজার্ভেশন করেছি। obc ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছে ওরা। তাহলে কি ওরা টাকা পাবে না? তোমরা কেন বন্ধ করে দিয়েছ। আপনাদের পাহারাদার হিসাবে আমি থাকি। obc scholarship-এর টাকা আমরাই দেব। ৮০০ টাকা করে । ভোটের সময় তোমরা বলতে আসবে না obc-রা ভোট দাও।"
এরপরেই মমতার কটাক্ষ, "সব জায়গায় দেখবেন ওঁর মুখ। উনি খেতে দিয়েছেন। উনি রেশন দিয়েছেন। ছবি তখনই টাঙানো যায়, যাঁকে মানুষ শ্রদ্ধা করে।"
গত মঙ্গলবারই আলিপুরদুয়ারে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই তিনি গত বুধবার কপ্টারে মেঘালয় সফরে যান। এই সফরকালে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা সুভাষিনী গ্রাউন্ডের প্রশাসনিক সভাতেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। কিন্তু, মঞ্চে বসেননি। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে আহ্বান করলে উপস্থিত সকলকে প্রণাম করে মঞ্চ থেকে নেমে যান।