শুধু এই হাড় হিম করা দৃশ্য নয়, মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জে সাধারণ মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া পুলিশকর্মীদের তাড়া করে এ ভাবেই মেরেছে একদল উন্মত্ত মানুষ। সেই ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। অন্য একটি ভিডিও-য় দেখা গিয়েছে, একই ভাবে দুই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বাইরে বের করে এনে বেদম মারছে জনতা। তাঁদের মধ্যে একজন রেহাই পেতে নিজের দু কান ধরে নতজানুও হন। তার পরেও ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের দিকে ইট ছুড়ে মারতে দেখা গিয়েছে অভিযুক্তদের।
advertisement
আরও পড়ুন: শুধু শক্তি নয়, বুদ্ধির জোরে ৭১ জন পড়ুয়াকে বাঁচালেন পুলিশ অফিসার আজহার! প্রশংসায় মমতাও
কালিয়াগঞ্জে পুলিশের এই অসহায় আত্মসমর্পণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এ নিয়ে রাজ্য মনোজ মালব্যের উপরে ক্ষোভও প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একদল দুর্বৃত্ত যখন পুলিশকে ঘিরে ধরে এভাবে মারধর করছে, তখন কেন পুলিশ কঠোর হতে পারল না সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, 'পুলিশ কি হাতে চুড়ি পরে বসে আছে?'
শুধু তাই নয, থানা এবং পুলিশের উপরে হামলা্র এত বড় পরিকল্পনা চলছে তা কেন গোয়েন্দারা আগাম জানতে পারলেন না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জে থানায় হামলা পরিকল্পিত, সরাসরি বিজেপি-কে দায়ী করে বিস্ফোরক মমতা
এক নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে চরম উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ। গতকাল পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ওই নাবালিকার মৃত্যু বিষক্রিয়ায় হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর পরেই মঙ্গলবার বিকেলে কালিয়াগঞ্জ থানায় হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। থানা চত্বর, পুলিশকর্মীদের কোয়ার্টারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণভয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নেন পুলিশকর্মীরা। সেখানে ঢুকেও তাঁদের উপরে হামলা, মারধর চলে।
যদিও এই ঘটনার দায় পুরোপুরি বিজেপি-র উপরেই চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা বললেও গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী চরম ক্ষুব্ধ বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। ওই সূত্র অনুযায়ী, ডিজি-কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্টেলিজেন্স কেন ঠিকমতো কাজ করছে না? সহ্যের সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে এবার। পুলিশের গায়ে কেউ যদি কেউ হাত তোলে তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? আমি ছবিটা দেখলাম পুলিশকে মারছে। পুলিশ কি হাতে চুড়ি পরে রয়েছে? যারা এই ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। গুবলি না চালিয়ে, লাঠি না চালিয়েও পরিস্থিতি শান্ত করা যায়। পুলিশকে পাথর ছুড়ে মারছে, এত সাহস ওরা কোথা থেকে পাচ্ছে? আমি এসব বরদাস্ত করব না। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতেই হবে।
পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় যেভাবে পুলিশ ওই নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, তা নিয়েও সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই ভাবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কলকাতা, কৃষ্ণনগর, মালদহ এবং শিলিগুড়িতে পুলিশের চারটি জোন করা হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী ডিজি-কে জানিয়েছেন বলে খবর।
সহ প্রতিবেদন- অভিজিৎ চন্দ
