মাটির ২৩ মিটার গভীরে এই কংক্রিটের তাল পর পর আছড়ে পড়ছে শাফটের দেওয়ালে। যে যন্ত্র থেকে গোলার বদলে এমন ভাবে কংক্রিট ছোড়া হচ্ছে, তার কাজ কামানের ঠিক উল্টো। কামান গোলা ছোড়ে ভাঙতে। এই যন্ত্র কংক্রিট ছুড়ছে বাঁচাতে। শহরে দীপাবলির আগে বউবাজার নতুন করে যাতে বিপর্যয় না নামে তার জন্যই এমন ব্যবস্থা। বউবাজারে মাটির নীচে ঠিক কী করতে চলেছেন কেএমআরসিএল-এর প্রযুক্তিবিদরা? বিষয়টা স্পষ্ট করে দিলেন সংস্থার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্তা নরেশচন্দ্র কারমালি নিজেই। বললেন, ‘যে জায়গা দিয়ে জল ঢুকে এসেছিল, আগে এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে সেই জায়গা দিয়ে আর জল ঢুকতে না পারে। এর জন্য প্রথমেই অনেকটা এলাকায় কংক্রিট ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’
advertisement
আরও পড়ুন : বউবাজারের বাড়িতে নতুন ফাটল, শেষমেশ কি হবে সুড়ঙ্গ জোড়ার কাজ, নাকি সবই অনিশ্চিত
প্রযুক্তিবিদ বলছেন, ‘মাটির মধ্যে কংক্রিট ফেলে জমিয়ে দেওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। কিন্তু সমস্যা হয় দেওয়ালের মত খাড়া কোনও নির্মাণের গায়ে কংক্রিটের স্তর জমাতে গেলে।’ এর জন্যই বিশেষ যন্ত্র দিয়ে কংক্রিটের ডেলা ছোড়া হচ্ছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় একেই বলা হয় ‘শট ক্রিট’। পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে পর পর তিনটে স্তরে কংক্রিট জমানো হচ্ছে সুড়ঙ্গের চারপাশের দেওয়ালে। গত ১১ মে বউবাজারে নতুন করে যে বিপর্যয় নেমে আসে, তার নেপথ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিপর্যয়ের আগের দিনই কলকাতায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫৭.৮ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল।
আরও পড়ুন : পরমাণু ডুবো জাহাজ আরিহান্ত থেকে মিসাইল পরীক্ষা সফল, চিনকে টক্কর দিতে ভারতের হাতে মোক্ষম অস্ত্র
পুণার ক্লাইমেট রিসার্চ ডিভিশন জানাচ্ছে, মার্চ ও এপ্রিলের দীর্ঘ অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে যাওয়া শহরে মে মাসে হঠাৎই পরিস্থিতি বদলে যায়। মহাগরে মে-তে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১১০.৫ মিলিমিটার থাকে। ২০২২-এর ১৬ মে পর্যন্ত কলকাতা ১৮০.৮ মিমি অর্থাৎ গোটা মাসের গড়ের চেয়ে ৬৩ মিমি বেশি বৃষ্টি পেয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিই এখন কেএমআরসিএল কর্তাদের মাথাব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ। বিশেষ করে এবছর বর্ষা এগিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকায় প্রযুক্তিবিদদের হাতে সময় একেবারেই নেই।
নজরে কলকাতায় জুনের বৃষ্টি
কলকাতায় জুন মাসে গড় বৃষ্টি — ২৮৭.৫ মিমি
২০২১-এর জুনে বৃষ্টি — ৪০১.৮ মিমি
গত বছর স্বাভাবিকের তুলনায় — ১১৪.৩ মিমি বৃষ্টি
শতাংশের নিরিখে — গত জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি
২০২১-এর জুনে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি — ১৪৪ মিমি
পুজো থেকে শুরু করে এখনও কয়েকদিন বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। তবে এবারে মদন দত্ত লেনের দুর্ঘটনার কারণ আসলে কী, তা এখনও নিশ্চিত নয় কেএমআরসিএল-এর কাছে।
