পুলিশ বিভাগের মহিলা কর্মীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য একটি ‘ক্রেশ হাউজ’ (Crèche House) বানানোর কথা তাঁর মাথাতেই প্রথম আসে। আর আইডিয়া আসা মাত্রই তা বাস্তবায়িত করার কাজে লেগে পড়েন তিনি। গত জানুয়ারিতে মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে সব কিছু চূড়ান্ত করে ফেলেন। অবশেষে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে (International Women’s Day) অর্থাৎ ৮ মার্চ ওই প্রস্তাবিত ক্রেশটি (Crèche) তৈরির কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যেই ক্রেশটি তৈরির কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে।
advertisement
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার (Women Civic Volunteers) থেকে শুরু করে মহিলা ইনস্পেক্টরদের সন্তানরা ওই ক্রেশে থাকে। এমনকী মহিলা পুলিশ অফিসাররাও নিজেদের সন্তানদেরও সেখানে রাখেন। আসলে কর্মস্থলে আসার সময় মায়েরা নিজেদের বাচ্চাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। যত ক্ষণ না তাঁদের শিফট শেষ হচ্ছে, তত ক্ষণ ক্রেশে থাকে বাচ্চারা। বর্তমানে ওই ক্রেশে থাকে ৫-৬টি বাচ্চা। মাঝেমধ্যে সেই সংখ্যাটা বেড়ে অবশ্য ১০-১১ হয়ে যায়। আর ক্রেশে থাকা ছেলে-মেয়েদের বয়স ২ বছর থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।
আরও পড়ুন : বাবা দোকানের কর্মী, মা দর্জি, গণিত ও অর্থনীতি পড়তে বৃত্তি নিয়ে আমেরিকার পথে প্রত্যন্ত গ্রামের কিশোরী
News18-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপরাজিতা রাই বলেন, “ক্রেশে বাচ্চাদের দেখভাল করার জন্য মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিযুক্ত করা হয়েছিল। আর সত্যিই আমাদের সৌভাগ্য যে, এই কাজে সাহায্য করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন প্রাক্তন স্থানীয় প্যারামেডিক্যাল কর্মীরাও। তাঁদের প্রত্যেকেরই শিশুদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রায় ১০ বছরের। আসলে মহিলা পুলিশকর্মীদের সন্তানদের বেড়ে ওঠার জন্য একটা নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান যে, মহিলা কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে বার বার সন্তানদের বড় করার প্রসঙ্গই উঠে এসেছে। কর্মীরা জানিয়েছিলেন যে, কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ আসায় তাঁরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। অনেকে ছুটি বাড়ানোর আর্জি জানান। কেউ কেউ আবার কোনও উপায় না-দেখে পড়শিদের বাড়িতেই রেখে দিতেন সন্তানদের। এখানেই শেষ নয়, কিছু কিছু কর্মী তো এ-ও জানিয়েছেন যে, বাচ্চাদের জন্য খাবার বানিয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়েই কাজে বেরতে হয় তাঁদের। ফলে ডিউটি চলাকালীন সন্তানদের জন্য চিন্তা এবং উদ্বেগ কাজ করত মায়েদের মনে। এসপি-র কথায়, “আমরা মনে করি, মাতৃত্ব একটা আশীর্বাদ। তবে মহিলাদের কেরিয়ার গড়ার স্বপ্নের পথে যেন এটা বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেটাই কাম্য।”
কালিম্পংয়ের ওই ক্রেশে আপাতত এক কেয়ারটেকার রয়েছেন। তিনি এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা বাচ্চাদের দেখভাল করেন। তারা ঠিক করে খেল কি না, সেটা দেখার পাশাপাশি বাচ্চাদের হোমওয়ার্কে সাহায্য করা তো আছেই। সেই সঙ্গে শিশুদের সঙ্গে খেলাধূলাও করেন তাঁরা।
আর এ-ভাবেই পথ দেখাচ্ছে কালিম্পং। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও এই ক্রেশের তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে পুরুষ এবং মহিলা উভয় পুলিশকর্মীই নিজেদের সন্তানদের রাখতে পারেন। তবে আপাতত এই সুবিধা নিচ্ছেন শুধুমাত্র মহিলা কর্মীরাই।
