ধনখড় পদত্যাগ করেছেন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এটিকে ‘অপসারণের আড়াল’ বলেই দেখা উচিত। কারণ, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা আসেনি। এমনকি রাষ্ট্রপতির তরফ থেকেও ইস্তফা গৃহীত হলেও—কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।
উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আচমকা পদত্যাগ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “উনি তো যথেষ্টই সুস্থ। এটার পেছনে অন্য কিছু আছে কিনা, আমি বলতে পারব না। তবে ঘটনাটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।”
advertisement
আপনার পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট আছে? তাহলে এখনই এটা করুন, নইলে অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ হয়ে যাবে!
একুশে জুলাইয়ের পরের দিনই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন:
“আমি কীভাবে জানব এর পেছনে কোনও গড়বড় আছে কি না! আমি তো ডাক্তার নই। তবে যতদূর জানি উনি যথেষ্টই সুস্থ। তাহলে পদত্যাগ করলেন কেন?”
তিনি আরও যোগ করেন:
“আমার মনে হয়, পুরো ঘটনাটাই সাজানো হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে না।”
কেন জল্পনার কেন্দ্রে ধনখড়ের পদত্যাগ?
রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করা খবরে যা উঠে আসছে, তাতে ধনখড়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্কের অবনতি মূলত বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত মন্তব্য থেকেই শুরু। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় ও মন্তব্যের বিরোধিতা করে ধনখড় বলেছিলেন—”শীর্ষ আদালত নিজেকে সুপার পার্লামেন্ট মনে করছে।” এই বক্তব্যের পরেই কেন্দ্রের তরফে ধনখড়কে পরোক্ষ বার্তা দেওয়া হয়, এমন মন্তব্য যেন ভবিষ্যতে না করেন। তবে ধনখড় পাল্টা জানান, তিনি আইন জানেন, এবং সেই জ্ঞান থেকেই বক্তব্য রেখেছেন।
ঘটনা চরমে ওঠে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণ বিতর্কে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই ধনখড়ের একাধিক মন্তব্য কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সেই চাপের ফলেই একপ্রকার ‘চাপ প্রয়োগে পদত্যাগ’ ঘটানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বার্তা কি লুকিয়ে আছে ধনখড়-পর্বে?
ধনখড়ের সঙ্গে কেন্দ্রের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে বিজেপির অন্দরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ধনখড়ের অতিসক্রিয়তা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছিল। আবার অনেকেই মনে করছেন, এটা আগামী লোকসভা নির্বাচনের কৌশলের অংশ হতে পারে।
মমতার বার্তা স্পষ্ট:
“আমি সব ভাষাকে সম্মান করি, সব রাজ্যকে সম্মান করি। কিন্তু কেন্দ্র যদি মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে প্রশ্ন তোলা তো আমার দায়িত্ব।”
“আগে ঘর সামলান, তারপর বাংলার দিকে তাকান।”
ধনখড়ের পদত্যাগ আপাতত দেশের রাজনীতিতে এক বিস্ময়কর মোড়। এর পিছনে সুস্থতা নাকি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সেই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের কোলেই। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, বঙ্গ রাজনীতিতে এই ইস্তফা নিছক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঘটনা হিসেবে ধরা হচ্ছে না।