বৈঠকে একাধিক দলের প্রশ্ন— “কমিশন আধার কার্ডকে কেন বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে নিচ্ছে না?” এই প্রসঙ্গেই শুরু হয় উত্তপ্ত বিতর্ক। তৃণমূল, সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা একযোগে কমিশনের সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলেন। বৈঠক চলাকালীনই শুরু হয় চিৎকার, অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের ঝড়।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনেও চমক! কী কী থাকছে? কত দিন চলবে? জানুন বিশদে
advertisement
সিপিআই(এম)-এর তরফে সাফ প্রশ্ন তোলা হয়— “কোন আইন অনুযায়ী কমিশন নির্ধারণ করছে কে নাগরিক আর কে নয়?” অন্যদিকে, তৃণমূলের প্রতিনিধি সরাসরি বলেন, “বাংলাদেশি জানলেন কী ভাবে?” — এই মন্তব্যে আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বৈঠকের ঘরে।
আতঙ্কে মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে। সিইও-এর সর্বদল বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ একাধিক রাজনৈতিক দলের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সিইও-র উপস্থিতিতেই সভা বারবার থামাতে হয়। সভা শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ করতে গিয়েও বারবার বাধা পড়ে রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক বাকযুদ্ধে।
সর্বদলীয় বৈঠকে উঠল CAA-এর প্রসঙ্গও। বৈঠকে সিপিআই(এম)-এর প্রতিনিধির প্রশ্ন— “যদি ভোটার তালিকা থেকে কারও নাম বাদ যায়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-এর ভূমিকা কী হবে?” তাঁরা দাবি জানান, এই বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য ও সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করা হোক।
বৈঠক শেষে সিপিআই(এম)-এর সুজন চক্রবর্তী জানান,
“আমাদের মনে হয়েছে, সিইও অফিস এখনো প্রস্তুত নয়। বলা হচ্ছে ১২টি ডকুমেন্ট নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজন — কিন্তু একটিকে যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ না ধরা হয়, তবে বাকি ১১টি কি নাগরিকত্বের প্রমাণ? এটা স্পষ্টভাবে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, একদিকে CAA, অন্যদিকে SIR— দুটোই হাত ধরাধরি করে চলছে। বাংলার মানুষকে ইচ্ছে করেই বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”
advertisement
এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মুখ খোলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ,
“SIR ও NRC-র নামে বাংলার মানুষকে আতঙ্কে ফেলা হচ্ছে। এতটাই ভয় তৈরি হয়েছে যে, এই আতঙ্কে মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমরা কমিশনকে জিজ্ঞেস করেছি— এর দায় কে নেবে? কোনও উত্তর মেলেনি। দু’মাসে ৮ কোটিরও বেশি ভোটারের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছেন আপনারা! কাদের নির্দেশে করছেন এটা? যদি দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে, তাহলে এখানে বৈঠক কেন?”
অরূপ বিশ্বাস আরও বলেন,
“সবটাই আগে থেকে সাজানো— CAA আর NRC প্রয়োগের প্রস্তুতি চলছে। রাজ্যে একের পর এক CAA ক্যাম্প বসানো হচ্ছে।”
তৃণমূলের আরেক নেতা ফিরহাদ হাকিম আরও কড়া সুরে বলেন,
“SIR করে বাংলায় যদি একটিও বৈধ ভোটারের নাম কাটা হয়, তাহলে আমরা রাস্তায় নামব। এটা মানুষকে ভুয়ো আতঙ্কে ফেলছে। এলাকায় এলাকায় কেন CAA ক্যাম্প বসানো হচ্ছে? নির্বাচন কমিশন আর বিজেপি এখন ভাইভাই হয়ে গেছে। এইভাবে চললে আমরা প্রতিবাদে পা ভেঙে দেব!”
তিনি আরও যোগ করেন,
“উত্তরবঙ্গে দুর্যোগে বহু মানুষের কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম বাদ গেলে আমরা আন্দোলনে নামব। সরকার বলছে প্রকাশ করা হবে, কিন্তু কাদের নাম কাটা হচ্ছে, সেই নিয়ে ভয় ছড়ানো হচ্ছে।”
অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে শিশির বাজরিয়া পাল্টা আক্রমণ করে বলেন,
“আগরপাড়ায় যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। NRC আতঙ্ক তো তিনিই ছড়িয়েছেন। রাজ্যে কোথায় NRC কার্যকর হয়েছে? তৃণমূল নিজেরাই ভয় তৈরি করছে। SIR নিয়ে আমরা বিজেপি হিসেবে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।”
তিনি আরও বলেন,
“BLA-দের নাম কমানো হয়েছে কারণ তাঁদের ফোন করে ভয় দেখানো হচ্ছে। অবাক লাগছে, আজ তৃণমূল BLA-দের নিরাপত্তার কথা বলছে! ২০২৬ সালের ভোটে নতুন সরকার হবে, তখন আমরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জবাব দেব। আজ প্রমাণ হয়ে গেল, সিপিএম আসলে তৃণমূলের ‘বি টিম’ হয়ে কাজ করছে।”
