#কলকাতা: এ বার বিপদ সঙ্কেত লুকিয়ে বাঘাযতীন উড়ালপুলে। ইএম বাইপাসের ওপরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ফ্লাইওভার। সেই সেতু নিয়ে বিপদ আছে বলে রাজ্যকে রিপোর্ট দিল ব্রিজ অ্যাডভাইসারি কমিটি। সমস্যা মেটাতে ডেক স্ল্যাবে বদল ও পিলারের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানাচ্ছে রাজ্য সরকার। ২০০২ সালে ইএম বাইপাসের ওপর তৈরি করা হয় বাঘাযতীন সেতু। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার সোনারপুরগামী লাইনের ওপরে বানানো হয় রেলওয়ে ওভার ব্রিজ। বর্তমানে যে অংশ দিয়ে সায়েন্স সিটি থেকে গড়িয়ার দিকে যাওয়া যায় সেই অংশ আগে তৈরি করা হয়। সেতুর অবস্থা খারাপ ও গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২০০৮ সালে ফের একটা প্রান্ত বানানো হয়। যে অংশ দিয়ে গড়িয়া থেকে সায়েন্স সিটির দিকে আসা যায়।
advertisement
বয়সে নবীন সেতুর দুই অংশের অবস্থাই ভীষণ খারাপ বলে জানিয়ে দিয়েছে সেতু বিশেষজ্ঞ কমিটি। প্রায় ৬০০ মিটার লম্বা এই সেতুর গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কংক্রিটের ব্রিজ আগে খারাপ হয়। কিন্তু যথাযথ ভাবে নজরদারি চালিয়ে কাজ করলে প্রায় ৭৫ বছর আয়ু থাকে এই ধরণের সেতুর। কিন্তু এখনই যা অবস্থা তাতে ১৯ ও ১২ বছরের ব্যবধানে সেতুর দুই অংশের হাল দেখে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ সংস্থা RITES এই সেতু পরীক্ষার পরে জানায় সেতুর গার্ডারে বিচ্যুতি ঘটেছে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল এই সেতুর অবস্থা ভীষণ খারাপ।
২০১৭ সালে এই সেতুর নয়া অংশের একটা চাঙড় ভেঙে পড়ে। সেতু তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি জানায় আরভিএনএলের কাজের জন্যে সেতুর ক্ষতি হয়েছে। প্রসঙ্গত গড়িয়া থেকে বিমানবন্দরগামী মেট্রোরেলের কাজের সময়ে এই সেতুর পুরানো অংশের পিলারের ওপরে গার্ডার লঞ্চার বসানো হয়েছিল। রাজ্যের অভিযোগ ছিল, তাতে সেতুর ক্ষতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিন বার এই সেতুর নানা অংশে কাজ হয়েছে। গত বছর ১৩ থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত সেতু বন্ধ রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সেতুর ভার বহনের পরীক্ষা করা হয়। তারপরেও সেতু নিয়ে আশার কথা শোনাতে পারলেন না সেতু বিশেষজ্ঞরা।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ সোমের মতে, এই বাঘাযতীন সেতুর এক্সপ্যানশন জয়েন্ট অসম। এই সেতুর স্প্যান দুরত্ব ১৮.৫ মিটার করে। ফলে গাড়ি নিয়ে গেলেই মনে হয় যেন ধাক্কা খাচ্ছি। একটা কম্পন তৈরি হয়। যার জেরে সেতুর আরও ক্ষতি হয়। চিংড়িঘাটা সেতুর ক্ষেত্রে যেমন নকশায় ত্রুটি আছে এখানে তা নেই। কিন্তু এই সেতু বানানোর সময় যে খেয়াল রাখা উচিত ছিল তা হয়নি। ফলে নির্মাণকাজে গন্ডগোল হয়েছে। ফলে এই সেতুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সকলে।
রাজ্যের নগরায়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, এই সেতুর ডেক স্ল্যাবে বদল আনতে হবে। বেশ কিছু নতুন পিলার সংযোজন করতে হবে। যাতে নিচে থেকে সেতুর ভার ধরে রাখা যায়। ইএম বাইপাসের মতো ব্যস্ততম রাস্তায় সেতু ভেঙে আবার তৈরি করা যে ভীষণ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জ কাজ, তা মানছেন কেএমডিএ আধিকারিকরা। অন্যদিকে, বিশ্বজিৎ বাবুর মতে, এই সেতু পুরোপুরি না ভেঙে সারানো সম্ভব। সেই কাজ হল সেতুর ওপরের ডেক ভেঙে ফেলা। তারপর স্টিলের সেতু বানানো হোক। স্টিলের সেতু দ্রুত বানানো যাবে। পিলার না ভেঙে সেগুলিকেও ব্যবহার করা যাবে। আপাতত সেতু রক্ষণাবেক্ষণের ওপরেই জোর দিচ্ছে কেএমডিএ। তবে যে ভাবে একের পর এক কলকাতার সেতুর অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট আসছে তাতে চিন্তা বাড়ছে সরকারের।