রাজ্যের গ্রামীণ গৃহহীনদের মাথার উপর ছাদ দিতে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা বিলির পর দু’মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও ১২ লক্ষ বাড়ির মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। কতটা এগোচ্ছা তা নিয়মিত তদারিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত আধিকারিকদের। মাত্র ৩ লক্ষ ১৩ হাজারের কিছু বেশি উপভোক্তার কাজকর্ম দেখার জন্য আধিকারিকরা পরিদর্শন করেছেন । সম্প্রতি রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের এক রিপোর্টে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের কাজের আগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই রিপোর্টে দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২১ জেলায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার ২১৫ টি বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নির্মিয়মান বাড়ির ভিত থেকে লিনটন অর্থাৎ ঘরের বিম পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার ৪৪৩ টি বাড়ির!
advertisement
রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিক জানান, ১২ লক্ষ নির্বাচিত উপভোক্তার মধ্যে এখনও চার জেলায় ২ হাজার ২৮৬ জনকে প্রথম কিস্তির টাকা পায়নি। তাদের আবেদনের প্রশাসনিক যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। এই জেলাগুলি হল কোচবিহার,উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি ও মুর্শিদাবাদ। বাংলার বাড়ি প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য সরকার স্টার্ন্ডাড অপারেশন প্রসিডিউর(এসওপি) তৈরি করে দিয়েছে। যেহেতু গরীব মানুষ নিজেদের বসবাসের জন্য সরকারি অর্থে এই বাড়ি তৈরি করছে, তাই সরকারি আধিকরিকদের নির্মাণ কাজে নজরদারি ও সবরকম সহযোগিতার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এসওপিতে।
ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত আধিকারিকদের মাসে অন্তত একবার করে নির্মিয়মান এই বাড়ির কাজ পরিদর্শনে যেতে বলা হয়েছে। তা যে হচ্ছে না পঞ্চায়েত দফতরের এই রিপোর্টেই পরিষ্কার। রিপোর্টে দেওয়া তথ্য বলছে, এই নির্মাণ কাজ সবচেয়ে ধীর গতিতে চলছে এই তিন জেলায়! দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সবচেয়ে বেশি গরীব মানুষ বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন। এই সংখ্যাটা ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৩০। এর মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ৪ হাজার ৫২৭টিতে। উত্তর ২৪ পরগনায় ৮২ হাজার ১২৮ টি পরিবার এই প্রকল্পের সুযোগ পেয়েছে। সেখানে কাজ শুরু হয়েছে ৩ হাজার ৬২৭টি বাড়ির নির্মাণ শুরু হয়েছে। আর মুর্শিদাবাদে ৭৭ হাজার ৫৯৭ জন গরীব পরিবার মাথার ছাদ তৈরির জন্য সরকাররে কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেলেও ৪ হাজার ২২৬ টি পরিবার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তুলনায় ঝাড়গ্রাম, পূর্ব বধর্মান, নদীয়া, কোচবিহারে কাজের অগ্রগতি অনেকটাই ভাল বলে মনে করছে পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: গরমকালে ট্যাঙ্কির জল থাকবে ফ্রিজের মতো ঠান্ডা! করুন এই ছোট্ট কাজ, ম্যাজিক হবে!
এই রিপোর্টে বলা হলেছে, ঝাড়গ্রামে মাত্র ২১ হাজার ২৯৩ টি গরীব পরিবারকে এই প্রকল্পের সুবিধা দিতে নির্বাচিত করা হয়েছে। দুমাসেই এই জেলার ১৩ হাজার ২৮৮ জন উপভোক্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ৬৮৪ টি পরিবার তাদের ঘরে লিনটন পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন করে ফেলেছেন। পূর্ব বর্ধমানে ৭৯ হাজার ৪৫০ জন উপভোক্তার ৪৩ হাজার ৩৮৫ জন ,নদীয়ায় ৪৬ হাজার ৪৬৭ টি পরিবারের ২২ হাজার ৬৫৬ জন এবং কোচবিহারের ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৪১ জন উপভোক্তার মধ্যে ৪৫ হাজার ৮৭২ জন নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছে। নদীয়াতে ৯ হাজার ৬২৩ জন উপভোক্তা ইতিমধ্যেই সরকারি নির্দেশিকা মেনে ঘরের লিনটন পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন করেছে।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়