বালুরঘাটের বিধায়ক, অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়িকে সামনে রেখে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি দাবি করেছে, দুয়ারের সরকার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সবটাই প্রচার সর্বস্ব আর ভাঁওতা। পঞ্চায়েত ভোটের বৈতরণী পেরতে শাসক দলের কৌশল। তবে, অশোক লাহিড়ি ও দলের ইকনমিক সেলের নেতারা স্বীকার করেছেন, দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিকভাবেই এই প্রচারকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে না পারলে ঢাকঢোল পেটানো সরকারি প্রচারের পাশে দুয়ারে সরকার নিয়ে এই নিন্দে মন্দ ভোট রাজনীতির ময়দানে কাজে আসবে না।
advertisement
আরও পড়ুন: রবিবার চৌপথীতে ঝাঁপ খুলব... কেন এমন বললেন উদয়ন গুহ ?
দুয়ারে সরকারের প্রথম দিনে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ১৩২ টি শিবির আয়োজন করা হয়েছে। এই শিবিরগুলিতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ৬ লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ যোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে অংশীদার হওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন ৫ লাখ ১ হাজার মানুষ। লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা ভাতার মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে মানুষের আগ্রহ সর্বাধিক।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ঘোষণা অনুযায়ী একমাস ধরে চলবে এই কর্মসূচি। আজ থেকে আগামী ১০ দিন নাম নথিভুক্ত করার কাজ চলবে। এরপর বাকি ২০ দিনে আবেদনকারী উপভোক্তাদের আবেদন যাচাই করে তা কার্যকর করতে হবে। দুয়ারে সরকারের প্রথম দিনে মানুষের এই সাড়া আগামী দশ দিন অব্যাহত থাকলে ৫০ লক্ষের বেশি নাম নথিভুক্ত হবে। অর্থাৎ, প্রায় ২ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি, রয়েছে রাজ্যের গ্রামীণ এলকায় ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ বা সংস্কারের অঙ্গীকার। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা শাসক দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে।
নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দূর্নীতির দায়ে বিদ্ধ তৃণমূল ও রাজ্য সরকার। সরকারি কর্মচারিরা মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে রণংদেহী। গ্রামের মানুষের ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। অভিযোগ, কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষিত বেকার যুবক, যুবতীদের সামনে চাকরি বা কর্মসংস্থানের কোনও দিশা নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এসব সমস্যাকে সামনে রেখে শাসক বিরোধী হাওয়া যখন জোরালো হওয়ার সম্ভবনা, তখন রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার, খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা বিরোধীদের। সে কারণে, রাজ্য সরকারের এই কর্মসূচি শুরুর আগেই তোপ দাগা শুরু করেছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: কোথায় গেলেন প্রশান্ত কিশোর? বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁবুতে দিন কাটছে ভোট গুরুর
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, 'মনে রাখবেন, শুরুটা কিন্তু পয়লা এপ্রিল। সত্যিই বাংলার মানুষের জন্য ভাল কিছু সরকার করতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী তার সূচনা পয়লা বৈশাখ করতেন। কিন্তু, আসলে মুখ্যমন্ত্রী তো ভোটের বৈতরণী পেরতে চান মানুষকে ধোঁকা দিয়ে। তাই শুরুটাও পয়লা এপ্রিল। মানে বাংলার মানুষকে উনি এপ্রিল ফুল করলেন।'
বিজেপি বিধায়ক অর্থনীতিবিদ ডক্টর অশোক লাহিড়িকে সামনে এনে রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে চেয়েছে, দুয়ারে সরকার আসলে ভোট সর্বস্ব একটা মিথ্যা প্রচার। সরকারের কোষাগারে টাকা নেই। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে চলেছেন। মানুষ যেন সরকারের এই মিথ্যা প্রচারে ভুল না করে। যদিও, দুয়ারে সরকারের 'মেগা প্রচার' আর প্রথম দিনের শিবিরে 'জনপ্লাবন' দেখে বিজেপি সহ বিরোধীরা কিছুটা থমকে। এ প্রসঙ্গে লাহিড়ি বলেন, 'দুয়ারে সরকার যে আসলে সরকারের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি তাকে মানুষকে বিশ্বাস করাতে হলে দলের পক্ষ থেকে এই প্রচারকে রাজনৈতিক ভাবে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া দরকার। না হলে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হবে।'