শুক্রবার বিধাননগর পুরভোটের প্রচারে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা শমীক ভট্টাচার্য়ের সঙ্গে অন্যতম বিক্ষুব্ধ নেতা সায়ন্তন বসু ' চা চক্রে' অংশ নেওয়ার পর সেই সম্ভাবনাই আরও জোরালো হল৷
'বিক্ষুব্ধ শিবিরে' সামিল হওয়া রাজ্যে বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। শমীক - সায়ন্তনের এই কর্মসূচি দেখে লবণ হ্রদের বিজেপি-তে ফিসফাস, বিধাননগর পুরভোটের প্রচারে আক্ষরিক অর্থেই 'এক ছাতার নীচে' দাঁড়িয়ে প্রচারসভা ও চা চক্রে উপস্থিত থেকে কি 'বিদ্রোহে ইতি টানার বার্তাই দিলেন সায়ন্তন?'
advertisement
আরও পড়ুন: 'মুসলিমদের আমার সঙ্গে যা সম্পর্ক, আমারও তাই', নির্বাচনের মুখে দাবি যোগী আদিত্যনাথের
সল্টলেকের বিডি মার্কেটের কাছেই আয়োজন করা হয়েছিল এই প্রচারসভা কাম চা চক্রের। সভায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়া সায়ম্তন বসু ও শমীক ভট্টাচার্যের ছবি থেকেই শুরু জল্পনার। শেষমেশ, বৃষ্টি এসে দুজনকেই দাঁড় করিয়ে দিল এক ছাতার নীচে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া কপি বুক স্টাইলের বিবৃতি সায়ন্তনের, রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ার জেরে তিনি নাকি ক্ষুব্ধ হননি। তবে, এটা স্বীকার করলেন, আপাতত ১২ ফেব্রুয়ারির চার পুরনিগমের ভোটে পুরভোট তিনি শুধু বিধাননগরে তাঁর নিজের বাড়ির ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচার করবেন। অন্য কিছু নয়।
শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সল্টলেকে ভোট প্রচারে সায়ন্তন বসু৷
জল্পনা বাড়িয়ে একদা বিক্ষুব্ধ শিবিরে থাকা সায়ন্তন বসুর কর্মসূচিতে থাকা নিয়ে শমীক বললেন, 'বিজেপিতে কেউ বিক্ষুব্ধ নয়। সায়ন্তন কি নিজেকে বিক্ষুব্ধ বলে দাবি করে? রাজু, সায়ন্তনকা তো দিলীপ ঘোষের সঙ্গে পুরভোটের প্রচারে আছেন।' তবে, রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র ও অন্যতম নেতা শমীক যাই বলুন না কেন, সবাই জানেন, সম্প্রতি রাজ্য কমিটির পদাধিকারীর তালিকা থেকে বাদ পড়ার পরেই কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন সায়ন্তন বসু।
রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রীতেশ তিওয়ারি, জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বিদ্রোহে সলতে পাকানোর কাজে সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গেই ছিলেন সায়ন্তনরা। মতুয়া মহাসংঘের নেতা ও বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে শিখণ্ডি করে সরসরি ঘোষিত কমিটি বদল ও রাজ্যের সাধারন সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারন দাবি করে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করে বিক্ষুব্ধ শিবির। দফায় দফায় কখনও কলকাতায় পোর্ট গেস্ট হাউসে কখনও আবার বনগাঁর ঠাকুরনগরে গোপন বৈঠক করেন বিক্ষুব্ধরা। সে রকমই একটি বৈঠকে যোগ দেন সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা। বিক্ষুব্ধ নেতাদের দেখা যায় পিকনিকের ময়দানেও।
আরও পড়ুন: কোনও বিধায়ক লড়ছেন না, নতুনদের সুযোগ, পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের
কিন্তু, আচমকা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারীকে দল সাময়িক বরখাস্ত করার নোটিস ধরাতেই বিদ্রোহ থমকে যায়। সূত্রের খবর, দলেরই এক শীর্ষ নেতার পরামর্শে সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা ঘোষিত বিক্ষুব্ধ জয়প্রকাশ, শান্তনুদের থেকে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন। ঘনিষ্ট মহলে সায়ন্তন বসুরা বলতে শুরু করেন, রাজ্য ও কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের কাছে তাঁদের যে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। ফলে, নতুন করে এ নিয়ে জলঘোলা করে শাস্তির কোপে পড়ার কোন কারণ নেই। দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনেভাব বুঝে আসার পর, সায়ন্তন, রাজুদের পাশাপাশি রীতেশ তিওয়ারীও সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ায় ইতি টেনে বিতর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেছেন।
ব্যতিক্রম শুধু জয়প্রকাশ মজুমদার। বিজেপি-তে ফেরানোর জন্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের উপরে চাপ বাড়াতে কার্যত প্রতিদিনই 'বেসুরো আক্রমণ' শানিয়ে চলেছেন জয়প্রকাশ। তাঁর ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়েও দলের অন্দরে জল্পনা তৈরি হয়েছে৷ আর ঠিক সেই সময় বিক্ষুব্ধ শিবির ছেড়ে বিজেপি-তে ফেরার রাস্তা চওড়া করতে নিঃশব্দে পুরভোটের প্রচার আর চা চক্রকে হাতিয়ার করে এগোচ্ছেন সায়ন্তনরা।