কলকাতা পুরসভার কাউন্সিল চেম্বারে এই বৈঠকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পুর কমিশনার বিনোদ কুমার, পর্যটন সচিব সৌমিত্র মোহন উপস্থিত ছিলেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে হোমস্টে নিয়ে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেন রাজ্য পর্যটন দফতরের আধিকারিকেরা।
কলকাতায় হোমস্টে তৈরি করতে গেলে কী কী গাইডলাইন মানতে হবে? সেই নির্দেশিকা দিয়েছেন পর্যটন দফতরের আধিকারিকেরা। নির্দেশিকায় পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে গেস্ট হাউস, পিজি বা অন্যান্য থাকার জায়গা—যেমন হোটেল, রেস্টরুম ইত্যাদি কোনমতেই হোমস্টে হিসেবে গণ্য হবে না।
advertisement
ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতেই হোমস্টে বানানো যাবে। সেখানে বাড়ির মালিক বা পরিবারের কোনও সদস্যকে একটি ঘরে থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যদের অন্তত একজন অতিথিদের দেখাশোনা করবেন। একটি বাড়িতে সর্বোচ্চ ছটি ঘরে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। সেখানেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বাড়ির মালিক।
রাজ্য পর্যটন দফতরের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী একটি হোমস্টেতে ১২টির বেশি শয্যা রাখা যাবে না। দুই শয্যা বিশিষ্ট ঘরের জন্য সর্বনিম্ন ফ্লোর এরিয়া হতে হবে ১২০ বর্গফুট। এক শয্যা বিশিষ্ট ঘরের জন্য সর্বনিম্ন ফ্লোর এরিয়া হতে হবে ১০০ বর্গফুট। বাথরুমের জন্য ৩০ বর্গফুট থাকতে হবে।
কেমন হবে হোমস্টে তারও একটি আইডিয়া দেওয়া হয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতরের নির্দেশিকায়। দু’ধরণের হোমস্টে হতে পারে, উন্নতমানের জন্য ‘গোল্ড’ ক্যাটিগরি এবং মোটামুটি মানের জন্য ‘সিলভার’ ক্যাটিগরি। আবেদন মূল্য—গোল্ডের জন্য এক হাজার টাকা এবং সিলভারের জন্য ৫০০ টাকা। ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তার ওয়েবসাইট: wbtourism.gov.in। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, হোমস্টের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থান এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়।
রাজ্য পর্যটন দফতর এবং কলকাতা পুরসভার সমন্বয়কারী হিসেবে এক নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পুরসভার এক গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিককে নোডাল অফিসারের দায়িত্বে বসানো হয়েছে। বিদেশ থেকে বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা কিংবা পড়াশোনা, এমনকী বেড়াতেও বহু মানুষ শহরে এই আসেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্য তো বটেই, পড়শি দেশ বা প্রথম বিশ্বের নানা জায়গা থেকেও পর্যটকরা আসেন কলকাতায়। শহরে বহু ব্যক্তিগত মালিকানার বাড়ি রয়েছে। সেগুলিকে হোটেল বা পিজি হিসেবে ভাড়া দিয়ে আয় করেন বাড়ির মালিকরা।
আরও পড়ুন: আজ গণেশ চতুর্থী, মহারাষ্ট্র নিবাসে পুজো দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বাড়িতে বিদেশীরা থাকলেও তার তথ্য থাকে না সরকার বা পুরসভা কারো হাতে। অনেক সময় অপরাধ হলেও সহজে আততায়ীর খোঁজ ও মেলে না। তাই শহরের আনাচে-কানাচে এই ধরনের পিজি এবং বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পুরো ব্যবস্থাটিকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধতে চাইছে রাজ্য। এর ফলে যে কোন সময় বাইপাস থেকে শুরু করে কলকাতার যেকোনো জায়গায় কোথায় কে আছেন তার তথ্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও পুরসভার কাছে সহজেই পাওয়া যাবে।
পুর সম্পত্তি কর মূল্যায়ন ও রাজস্ব আদায় বিভাগের আধিকারিক ভাস্কর ভট্টাচার্যকে এই নোডাল অফিসার করা হয়েছে। শহরে এই ধরনের বাড়িগুলি চিহ্নিত করা হবে, যাঁরা ইতিমধ্যেই বাড়ি-ভাড়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। জেলার মতো এখানেও তাঁদের অতিথি অভ্যর্থনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আরও কীভাবে সেই হোমস্টে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, তার পরিকল্পনা করা হবে। শহরের কোন-কোন স্থানে এ ধরনের হোমস্টে মিলবে, তার তথ্য থাকবে পর্যটন দফতর এবং পুরসভার ওয়েবসাইটে। পর্যটন ব্যবস্থাকে নিচু তলা থেকে ঢেলে সাজাতেই কলকাতা পৌরসভা ও রাজ্য পর্যটন দফতরের এই উদ্যোগ। সঙ্গে তৈরি হবে বহু কর্মসংস্থান।