এসএসসি-র বিতর্কিত নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় শিক্ষা সচিবের জবাবে বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, "অতিরিক্ত পদ তৈরি করে অবৈধ চাকরি রক্ষায় মন্ত্রিসভা, কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়? রাজ্যের কর দাতাদের অর্থ দিয়ে এ ধরনের অবৈধ নিয়োগকে কীভাবে মান্যতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে মন্ত্রিসভা ?'' বিচারপতির মতে, মন্ত্রিসভার এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু গর্হিত অপরাধই নয়, তার জন্য কমিশনের উচিত শাসক দলের প্রতীক কেড়ে নেওয়া। বিচারপতি বলেন, " তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য, দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছে করা যায় না।"
advertisement
আরও পড়ুন: ক্ষমতায় এলেই লক্ষ্মীর ভান্ডরে ২০০০ টাকা করে! সুকান্তর দাবিতে তীব্র শোরগোল, অস্বস্তিও
বিচারপতির এই মন্তব্যের পরেই তা নিয়ে মুখ খুলেছিল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা প্রকাশ্যেই তোপ দেগেছিলেন বিচারপতিকে নিশানা করে। কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, অবসরের পর রাজনীতির ময়দানে জায়গা পাকা করতেই এসব কথা বলছেন অভিজিৎ। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ''এই সরকারের দুর্নীতি তদন্তে বিচারপতির ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু, মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা খর্ব করা যায় না।'' কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরীরও বলেন, ''কোন সরকারের দুর্নীতির জন্য সেই দলের রাজনৈতিক প্রতীক কেড়ে নেওয়ার বিধানকে সমর্থন করা যায় না।'' আর, বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এটা বিচারপতির ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। একে বিজেপির সমর্থন বা বিরোধিতা করার কিছু নেই।''
আরও পড়ুন: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করে ছাড়ব! প্রণাম- সৌজন্য পর্ব মিটতেই মমতাকে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কুণাল থেকে চন্দ্রিমা, কল্যাণদের ক্ষোভের অন্য কারণ থাকলেও, সরসরি বিচারপতি বা তদন্তের বিষয়ে সমালোচনা করতে পারছিলেন না তারা। কিন্তু, কমিশনের কাছে তৃণমূলের প্রতীক কাড়া উচিত বলে বিচারপতির মন্তব্যের পর, বিচারপতিকে নিশানা করল তৃণমূল৷ তৃণমূলের সেই তালিকায় ঢুকে পড়লেন বিধানসভার অধ্যক্ষও।
বিধানসভায় সংবিধান দিবসের এক অনুষ্ঠানে বিচারপতি অভিজিৎ-এর মন্তব্য প্রসঙ্গে কোন রাখঢাক না করেই বিমান বলেন, "তদন্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সেটা বিচারপতি যেমন মনে করবেন, তেমনই করবেন। কিন্তু, বিচারালয় আর বিধানসভার এক্তিয়ার আলাদা। সংবিধান তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এখানে কোনও সংঘাতের জায়গা নেই। কোনও রাজনৈতিক দলকে তার লোগো বা প্রতীক দেয় দেশের নির্বাচন কমিশন। সেটা বিচারপতির বোধগম্য হওয়া উচিত। উনি হয়তো অত্যুৎসাহী হয়ে বলে ফেলেছেন।"
শিক্ষা দুর্নীতি কান্ডে একের পর এক মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শাসক দল। কিন্তু, শাসক দল তার প্রতি ক্ষুব্ধ হলেও, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আমজনতার কাছে রীতিমত "হিরো"র আসনে বসেছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু, এই প্রথম প্রতীক কাড়ার নিদান দেওয়ার জেরে বাম, কংগ্রেসতো বটেই, এমনকি বিজেপিকেও সেভাবে পাশে পেলেন না বিচারপতি।