বুধবার এই রিপোর্ট পাওয়ার পর বৈঠকের দ্বিতীয় দিনেই দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনওভাবেই বিজেপির সঙ্গে জোট করা যাবে না। শুধু তাই নয় বিজেপির সঙ্গে জোট করলে শাস্তি পেতে হবে। যদিও পঞ্চায়েতের সবক্ষেত্রে কীভাবে এই নজরদারি সম্ভব, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, "প্রতক্ষ্য ভাবে এই জোট না হলেও পরোক্ষ ভাবে এই জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হতে পারে কোনও এক নির্দল প্রার্থীকে শাসক দলের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সেই প্রার্থীকেই সবাই মিলে সমর্থন করে দিল। এতে সরাসরি দলের লাইন ভাঙা হল না। এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। তাই এটা আটকানো কঠিন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ায় বা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হতে না পারায় বেশকিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে এমন জায়গায় রাজনৈতিক মূল্যবোধ দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে। যদিও দলের তরফে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা মেনে চলতে হবেই। দলের তরফে এই বিষয়ে কড়া নজরদারি করা হবে।"
advertisement
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে বড় অভিযান, শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ শ্যামল আদক গ্রেফতার! তোলপাড় বাংলা
কিন্তু এই রকম পরিস্থিতি কেন তৈরি হল? দলের আরেক নেতা বলেন, "পঞ্চায়েত নির্বাচন হল একেবারেই নিচুতলার বিষয়। গ্রামের বিষয়। দূর থেকে সব জায়গায় নজর রাখাটাও অসুবিধা। শাসক দলের বিরুদ্ধে মানুষের অনেক ক্ষোভ রয়েছে। সে একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, জল সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ইত্যাদিতে শাসক দলের স্বজন পোষণের কারণে অবহেলিত হওয়া। দুর্নীতি, শাসক দলের আঞ্চলিক নেতাদের গা জোয়ারি মনোভাব, মিথ্যা মামলা থেকে শাসক দলের আশ্রিত স্থানীয় দুস্কৃতীদের অত্যাচারের মতো অনেককিছু রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলির মধ্যে ভোট ভাগ হওয়ার ফলে ফের তার লাভ তুলবে শাসকদল। এটা বুঝতে পেরেই এক হওয়ার চিন্তাভাবনা আসছে নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। সেই রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরাই ঠিক করবেন পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে। দল যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে চলা সবারই কর্তব্য। আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। আশা করি আমরা এটা পারব।"
আরও পড়ুন: ৬ জেলায় বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট, রবিবারের জন্য বড় সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র দফতরের!
আঞ্চলিক স্তরের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ঠেকাতে বিজেপির সঙ্গে বামপন্থীদের সমঝোতার তত্ত্ব সামনে এসেছে। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও নিচুতলার সিপিএমের নেতা কর্মীদের মনোভাবে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন জেলা নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে 'আগে রাম পরে বাম' এই তত্ত্বে বামেদের ভোট রামের দিকে চলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। যার ফলে রাজনৈতিক ভাবে অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছিল সিপিআইএম। বিজেপি যার পুরো লাভ তুলেছিল। শূন্য হয়ে গিয়েছিল বামেরা। তারপর থেকে নেতৃত্ব পদক্ষেপ শুরু করে। একদিকে নিজেদের ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচার, অন্যদিকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি। এরপর থেকেই পরিস্থিতির বদল শুরু হয়। শান্তিপুর থেকে শুরু করে বালিগঞ্জ, বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপিকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে থাকে বামেরা। উৎসাহিত হয়ে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করে মানুষের মন পাওয়া রেড ভলেন্টিয়ারদের কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা থেকে ছাত্র যুব থেকে তরুণ মুখ সামনের সারিতে নিয়ে আসা। কিন্তু নন্দকুমারে সমবায় নির্বাচনে তৃণমূলকে বেগ দিতে পারা রাম বাম জোট বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উৎসাহিত করেছে। যেটা নন্দকুমার মডেল বলে পরিচিত হয়েছে। পঞ্চায়েতে সেই মডেল অনুকরণের হিড়িক পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জেলার সিপিএম নেতারা। আর এত দিনের উদ্যোগে যে আশা দেখছিল আলিমুদ্দিন, তাতেও জল পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই কড়া পদক্ষেপ করে নিচুতলায় নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।