পুজোর থিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই, এবার পুজোয় মহিলা পুরোহিত থেকে শুরু করে পুজোর আয়োজনের যাবতীয় দায়িত্বে মহিলারা। সৌজন্যে রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চা। বিজেপির দূর্গাকে মর্তে আবাহন করে যিনি আনবেন তার নাম সুলতা মণ্ডল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলার গঙ্গারামপুরের মেয়ে।
আবার, সুকান্ত যে গৌড়বঙ্গ বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন, সুলতা সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী। সুলতা পেশাদার মহিলা পুরোহিত। এবার তাঁর হাতেই হবে বিজেপির ' দূ্র্গতিনাশিনী'র আবাহন।
advertisement
আরও পড়ুন: প্রাক্তন রাঁধুনির কাছে রয়েছে মারাত্মক তথ্য, অনুব্রতকে আরও ঘিরছে সিবিআই! নিশানায় সুকন্যাও
মুখে সুকান্তরা যাই বলুন না কেন, মহিলা পুরোহিত নির্বাচন আসলে বিজেপির সেই চমকের রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়। বিজেপি-র পুজোর থিমকে কটাক্ষ করে তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, 'মহিলা নির্যাতনের কথা বলার আগে ওদের একবার হাথরস, উন্নাওের কথা মনে করতে বলব।'
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হওয়া সত্বেও, নারী নিগ্রহে কোনও হেলদোল নেই সরকারের। এই অভিযোগ তুলে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড থেকে শুরু করে একাধিক ইস্যুতে, জাতীয় মহিলা কমিশন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলকে বার বার রাজ্য পাঠিয়ে রাজ্য সরকারের উপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে বিজেপি। উৎসবের এই আবহের মধ্যেও নারী নির্যাতনকে পুজোর থিম করে, এ বিষয়ে দলের রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রচারে টেনে আনল বিজেপি।
আরও পড়ুন: 'বিজেপি ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় হারে DA সরকারি কর্মীদের', বড় ঘোষণা সুকান্ত মজুমদারের
উৎসবের আঙিনায় রাজনীতিকে এভাবে টেনে আনার মধ্যে কোনও দোষ দেখছেন না রাজ্য বিজেপি-র মহিলা মোর্চার প্রাক্তনী অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর মতে, 'ঠিকই তো। আমরা, মহিলারা তো এ রাজ্যে ভাল নেই। নিরাপদ নই। প্রতিদিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও কোন না কোনও নারী নিগৃহীত হচ্ছন, ধর্ষিতা হচ্ছেন শাসক দলের ' দুষ্টু ' ছেলেদের দ্বারা৷ তাই উৎসব হলেও, আমরা এটা ভুলতে পারি না। মানুষকে ভুলিয়ে দিতে চাই না।'
এ দিকে, দূর্গোৎসবকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়ার পরেই সেই স্বীকৃতির কৃতিত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গেছিল কেন্দ্র, রাজ্যের মধ্যে। দূর্গা পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তেই কলকাতায় সেই তরজা আবার জমজমাট। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদানে আসলে যে রাজ্যের কোনও কৃতিত্বই নেই তা বোঝাতে গতকাল দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করার পরেও, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখিকে কলকাতায় পাঠাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ও এই স্বীকৃতি পাওয়ার পিছনে যেসব শিল্পীদের অবদান রয়ছে, তাঁদের একমঞ্চে সামিল করে সম্মান জানাতে, ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতার জাদুঘরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি।
পুজোর জনসংযোগে বিজেপির পালে হাওয়া দিতে মিঠুন চক্রবর্তীকে দমদম, আরামবাগ, বর্ধমান ও বালুরঘাটে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়ছে বিজেপির।
রাজনৈতিক দলের পুজো করা উচিত কি না তা নিয়ে বিজেপিতে তরজা চলেছে কয়ক বছর ধরেই৷ দিলীপ ঘোষরা মনে করতেন, রাজনৈতিক দলের কাজ পুজো করা নয়৷ দলের কর্মীরা দু' দিন পূজের মণ্ডপে গিয়ে আনন্দ করতেই পারেন, কিন্তু, ভারতীয় জনতা পার্টি একটা রাজনৈতিক দল। রাজনীতি করা তার কাজ, পুজো নয়।
এই বিষয়ে দিলীপের সঙ্গে সহমত ছিলেন সুকান্তও৷ কিন্তু, বাদ সাধলেন নতুন অভিভাবক সুনীল বনশাল। আইসিসিআর- এর বৈঠকে বনশালের নিদান জনসংযোগের হাতিয়ার করতে হবে দূর্গা পুজোকে। ফলে, বনশালের নির্দেশকে শিরোধার্য করে দূর্গা পূজো করতে নেমে পড়তে হয়েছে সুকান্তদের।
মমতার পুজো উদ্বোধনের সঙ্গে টেক্কা দিতে আবার সেই অমিত শাহদের পুজোর উদ্বোধনে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। শাহি আমন্ত্রণের ফল কী হবে তা জানা নেই। তবে, দলেরই একাংশ আবার মনে করেন বাঙলির দূর্গা পুজোয় অমিত শাহ, নাড্ডাদের উপস্থিতি যত কম হয় ততই মঙ্গল।