শমীক ভট্টাচার্য সাফ জানিয়ে দিলেন, “ওটা তো জঙ্গলের আইন, আমাদের সংস্কৃতি নয়।” এই বিপরীত অবস্থান প্রকাশ্যে আসতেই ফের প্রশ্নের মুখে গেরুয়া শিবিরের অন্তর্দলীয় সমন্বয়।সোমবার নাগরাকাটায় ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে আক্রান্ত হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ।
আরও পড়ুন: জাপানে ভারতীয় ‘১০০ টাকার’ মূল্য কত জানেন…? গ্যারান্টি, শুনলেই চমকাবেন!
advertisement
এরপর বুধবার এলাকায় গিয়ে কড়া বার্তা দেন সুকান্ত। বলেন, “পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে বিজেপি পাল্টা মার দেবে। গ্রেফতার না করলে আমরাও রাস্তায় নামব।” এই মন্তব্যে দলের একাংশ যখন চাঙ্গা, তখনই বৃহস্পতিবার সকালে একেবারে ভিন্ন সুরে শমীক। তাঁর মন্তব্য, “চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান—এসব জঙ্গলের রাজত্বে হয়। বিজেপি সেই সংস্কৃতির দল নয়। মানুষ আমাদের তিন বার কেন্দ্রে এনেছে, মানুষের উপরই আমাদের ভরসা। তাঁর সাফ বার্তা, রাজনীতিতে প্রতিশোধের নামে হিংসার জায়গা নেই—অন্তত বিজেপির পক্ষে নয়।”
এই পরস্পর বিরোধী বার্তাই ফের সামনে এনে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপির বহুদিনের পরিচিত অসংগঠিত চেহারা। শুভেন্দু-দিলীপ, দিলীপ-সুকান্ত, সুকান্ত-শমীক—নানা সময়েই একে অপরের বিপরীত সুরে কথা বলেছেন নেতারা। এই অবস্থান নির্বাচনী বছরে ঠিক কী বার্তা দিচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তিত রাজনৈতিক মহলও। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিচ্ছে যে দল, তাদের অন্দরেই যখন মতের এহেন ফারাক, তখন প্রশ্ন উঠছে, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে সত্যিই কি প্রস্তুত গেরুয়া শিবির?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংগঠনিক সমন্বয় না থাকলে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে। সুকান্তর ‘মার-পাল্টা মার’ হুঁশিয়ারিকে খারিজ করে শমীক বলেন, “ওটা তো জঙ্গলের আইন, আমাদের সংস্কৃতি নয়।” তাঁর এই বিপরীত অবস্থান প্রকাশ্যে আসতেই ফের প্রশ্নের মুখে গেরুয়া শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচনের আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন পরস্পরবিরোধী বার্তা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা কেই সামনে আনছে।
উত্তরবঙ্গের ত্রাণকার্যে শামিল হতে গিয়ে যেভাবে বিজেপির এক সাংসদ এবং এক বিধায়ক আক্রান্ত হয়েছেন, তাতে অনেকের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সকলেই বলছেন যে, এরপরেও কেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চুপ করে রয়েছে? এরপরেও কেন বসে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার? কেন তারা এই রাজ্যের প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপটুকু নিচ্ছে না! আর কতদিন তারা মুখ বন্ধ করে সবকিছু সহ্য করবে? আর বঙ্গ বিজেপিই বা কেন প্রতিরোধের রাস্তা বেছে নিতে পারছে না?
রাজ্য প্রশাসন, রাজ্য পুলিশ যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না, তারা তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা এই রাজ্যের পুলিশের নেই, তা তো বিজেপি খুব ভাল মতো জানে। তাহলে পাল্টা প্রতিরোধের রাস্তা তারা যদি বেছে না নেয়, তাহলে কর্মীদের মনোবল তারা কী করে বৃদ্ধি করবে? এই প্রশ্ন বিজেপির মধ্যে থেকেই অনেকে তুলতে শুরু করেছিলেন। এরপরেই আক্রান্ত সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে হাসপাতাল থেকে দেখে এসেই বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পাল্টা মারের হুঁশিয়ারি দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।