ইরাদেবীর কথা নতুন করে শিরোনামে উঠে আসতেই বোনের পরিচয় নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য (Mira Bhattacharya)। বোনের কথা অস্বীকার তো করেনইনি, বরং জানিয়েছিলেন, পরিবারের সকলের অমতেই এমন জীবনযাত্রা স্বেচ্ছায় নিজে বেছে নিয়েছেন ইরা। তাঁর মন পরিবর্তন করতে তিনিও অপারগ।
ডানলপের পথের জীবন থেকে এর আগেও স্বাভাবিক জীবনে ইরাকে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন অনেকে। আগেও ঠাঁই হয়েছিল মানসিক হাসপাতালে। কিন্তু বদলায়নি কিছুই। ইরাদেবীকে যাঁরা কাছ থেকে ইদানীং দেখছেন, তাঁরা বলছেন, এবার কিছুটা স্বাভাবিকভাবেই খড়দহ ফিরতে চেয়েছেন ইরা। বেশ কয়েকজন এগিয়েও এসেছেন তাঁকে সাহায্য করতে। তবে, নিজের গচ্ছিত টাকায় বাকি জীবন কাটাতে চান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরাদেবী। চান না সরকারি সাহায্যও।
advertisement
ইরা বসু খড়দহের প্রিয়নাথ গার্লস হাইস্কুলের জীবন বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। শীর্ণকায় চেহারা অপরিচ্ছন্ন পোশাক সারাদিন ঘুরে বেড়াতেন ডানলপ চত্বরে। রাত কাটত ফুটপাতে। দীর্ঘদিন তিনি ডানলপের রাস্তাতেই দিন রাত কাটিয়েছেন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয় জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকার পারিবারিক পরিচয় সামনে আসতেই তাই শোরগোল পড়ে যায়। নিয়ে যাওয়া হয় মানসিক হাসপাতালে। আর সেখানে থাকতে গিয়েই খড়দহে ফেরার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে নতুন বিপদ, জ্বরের মধ্যেই হানা দিল স্ক্রাব টাইফাস! নিশানায় সেই শিশুরাই
সেই সূত্রেই পানিহাটি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআইএম কাউন্সিলর সুদীপ রায়ের বাড়িতে আপাতত আশ্রয় হয়েছে তাঁর। তবে, আজ তাঁকে দেখলে বোঝা যাবে না কয়েকদিন আগেও ছেঁড়া পোশাকে পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। নিজেই দাবি করেছেন, স্বাভাবিক জীবনেই ফিরতে চান প্রাক্তন শিক্ষিকা। ইরাদেবীর বর্তমান আচরণ অনেকটাই স্বাভাবিক বলে করেছেন সংশ্লিষ্ট সিপিআইএম কাউন্সিলরও। চাকরি থেকে অবসরের পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবেই পেনশন পাননি তিনি। তবে, সুদীপবাবু জানিয়েছেন, সমস্ত কাগজপত্র জোগাড় করে ইরাদেবীকে পেনশন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তারপরে তিনি যেখানে খুশি থাকতে পারেন। ইরাদেবী নিজেও চান না, এক জায়গায় বদ্ধ হয়ে থাকতে। তাঁর সল্টলেকে একটি বাড়ি রয়েছে, সেখানেও থাকতে চান না তিনি। তবে, পথের জীবন শেষে এবার যে বাড়ির জীবন শুরু করতে চলেছেন, তাতেই খুশি তাঁর চেনাপরিচিতরা। আর ইরাদেবীও খুশি মিষ্টি আর ঘোলের শরবতে গলা ভিজিয়ে। একইসঙ্গে নিজের জীবন যে তিনি নিজের শর্তেই বাঁচবেন, তা আরও একবার স্পষ্ট করে বলেন, 'আমাকে আপনারা যদি বলেন, আমি খুব একগুঁয়ে। তবে বলব, আমার নিজস্ব একটা মত আছে। আমি কোনও খারাপ কাজ করব না। আমার আত্মীয়, স্বজন, দিদি-দাদারাও সেটা জানে।'
তথ্য সহায়তা: অরুণ ঘোষ