রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব নেওয়ার পর, নবান্ন অভিযানে নিজে যুক্ত হওয়ার কথা রাজ্য বিজেপিকে জানিয়েছিলেন সুনীল বনসল। সূত্রের খবর, নবান্ন অভিযানের দিন, রাজ্য বিজেপির দফতরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মোড়া ''ওয়ার রুম" থেকে অভিযানের দিকে নজর রাখা ও প্রয়োজনে নির্দেশ দেবেন রাজ্য বিজেপির নতুন সেনাপতি সুনীল বনশাল।
আরও পড়ুন: আবহাওয়ার বড় বদল, নিম্নচাপে ভারী বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া বাংলাজুড়ে! পুজো নিয়ে আশঙ্কা
advertisement
বনসলের পাশেই থাকবেন রাজ্যে বিজেপির সংগঠনে দুই শীর্ষ নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী ও সতীশ ধন্ড। থাকবেন, সংগঠনের উত্তর কলকাতা ও হাওড়ার কয়েকজন পোড় খাওয়া নেতা। রাজ্য বিজেপির এক নেতার মতে, নবান্ন অভিযানের গোটা পরিকল্পনার নীল নকশা তৈরি করা থেকে শুরু করে, সুকান্ত, শুভেন্দু ও দিলীপ - এই তিন শীর্ষ নেতাকে অভিযানের বর্শাফলক করে, তিনটি মিছিল করার পরিকল্পনা ছকে দিয়েছিলেন বনসল।
আরও পড়ুন: 'খেলা হবে', বাংলার দুই জেলাতে নতুন পরিকল্পনা তৃণমূলের! নজর অভিষেকের
এরপরেই, হেস্টিংসের বৈঠকে, প্রতিটি স্তরে নেতা, কর্মীদের মধ্য দায়িত্ব বন্টন ও বাকি পরিকল্পনার সবটাই ছকে দিয়েছেন বনসল। ওয়ার রুমে বসে নিজের তৈরি সেই নীল নকশার বাস্তবায়ন কতটা করতে পারল রাজ্য বিজেপি, এবার সেটাই দেখতে চান তিনি। সূত্রের খবর, ওয়ার রুমের এই পরিকল্পনাও বনসলেরই তৈরি। নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতি বৈঠকেই রাজ্য সভাপতিকে বনসল বলেছিলেন, '' অভিযানের জমায়েত থেকে শুরু করে মিছিলের অগ্রগতির পথে কোথায় কি ঘটল তা নিজের চোখে দেখতে চান তিনি। " এরপরেই, বনসলের নির্দেশে ওয়ার রুমের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে বিজপি৷
বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচির প্রচারে জমায়েত থেকে মিছিলের সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করছে বিজেপি। তার জন্য ৩ টি মিছিলে, ৩ টি গাড়িতে থাকছে ডেডিকেটেড ক্যামেরা ইউনিট। থাকবে একাধিক ড্রোন ক্যামেরা ও মাল্টিক্যাম জিমি জিপ। যা সাধারণভাবে সংবাদমাধ্যম ও রাজ্য বিজেপির সোশাল মিডিয়াগুলিকে দেওয়া হবে, তার লিঙ্ক থাকবে ওয়ার রুমে।
এ ছাড়া প্রায় শতাধিক ছোট ছোট বিজেপি মনোভাবাপন্ন পোর্টাল এর সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তাদের থেকেও কর্মসূচির প্রতি মুহূর্তের লাইভ ফিড নেওয়া হবে, যার লিঙ্ক থাকবে ওয়ার রুমের সঙ্গে । ওয়ার রুমের একাধিক স্ক্রিনে এই সব লাইভ ছবি দেখা যাবে৷ এছাড়া, তিনটি মিছিলেই থাকবে দলের মিডিয়া সেলের ২ জন করে মিডিয়া ইনচার্জ ও ৫ টি করে
মোট ১৫ টি জেলা মিডিয়ার বাছাই করা বিশ্বস্ত কর্মীরা। শুরু থেকে যারা বিশেষ বিশেষ মুহূর্তের ছবি নিজেদের মুঠোফোনের ক্যামেরায় তুলে তা পাঠিয়ে দেবে ওয়ার রুমে। যা দেখে পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল বদল থেকে শুরু করে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠানো যাবে ওয়ার রুম থেকে।
এদিকে, সূত্রের খবর, অভিযানের সময় পুলিশকে ফাঁদে ফেলতে নানা ধরনের ''উস্কানি"দেওয়ার 'গোপন" পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল বদল করে পুলিশকে কীভাবে ফাঁদে ফেলা যায়, সেই নির্দেশও আসবে ওয়ার রুম থেকে রিমোর্ট কন্ট্রেলে৷
সূত্রের খবর, নবান্ন অভিযানে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চেষ্টার কোন কসুর করবে না বিজেপি। তার জন্য এ ধরনের আন্দোলনে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যুব মোর্চার বাছাই করা তরুণ ব্রিগেডকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
অভিযানের আগের দিন ১২ সেপ্টেম্বর, দলের চূড়ান্ত বৈঠকে তারা কে, কোথায় কী ভূমিকা পালন করবে তা নির্দিষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হবে।
আর, এখানেই পুলিশের হাতে গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিজেপি। তাই আহত কর্মী, সমর্থকরা যাতে দ্রুত চিকিৎসার সুযোগ পায় তার দিকে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বনসল। জানা গেছে, বনসলের নির্দেশে রাজ্য বিজেপির ডক্টরস সেলের তত্ত্বাবধানে তৈরি রাখা হচ্ছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির, মোবাইল হসপিটাল এবং অ্যাম্বুলেন্স। পরিস্থিতি অনুযায়ী গুরুতর আহত কর্মীকে চিকিৎসা শিবিরে নিয়ে যেতে থাকবে একাধিক বাইক এম্বুলেন্স। কেবলমাত্র এই জন্যই তিনটি মিছিলে সামিল করা হচ্ছে কয়েকশো স্বেচ্ছাসেবককে। ওয়ার রুম থেকে নিদৃষ্ট ভাবে এই বিষয়টির দিকে নজর রাখা ও প্রয়োজনে নির্দেশ দেবেন বনশালরা।
তবে, দলেরই একাংশ বলছে, সব ভাল যার, শেষ ভালো। এই প্রবাদটা মনে রাখা দরকার৷ শেষ পর্যন্ত এত ঢক্কা নিনাদ করে সাফল্য না এলে কটাক্ষ করতে ছাড়বে না কেউই!