নয়াদিল্লি: বাংলাভাষী সোনালি বিবিকে বাংলাদেশি সন্দেহে সে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় শুক্রবার জোরাল সওয়াল-জবাব চলল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে৷ শুনানি চলাকালীন এক দিকে যেমন বাংলা বলায় পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক, হেনস্থা এমনকি, ভিনদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডের তরফে মামলায় সওয়াল করেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের এই অনুপ্রবেশ সমস্যা কী ভাবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ভৌগলিক জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷
advertisement
এদিন বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক সোনালি বিবিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডের তরফে মামলায় সওয়াল করেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি এদিন বলেন, ‘‘কীভাবে কোনও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যক্তি অনুপ্রবেশকারী প্রমাণিত হওয়ার আগেই স্রেফ সন্দেহের বশে কাউকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দিতে পারে? বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, তাঁদের সম্মতি আছে কিনা ফিরিয়ে নেওয়ার সেটা না জেনেই কীভাবে এটা করা হচ্ছে? একটি নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বললে তাঁদের বাংলাদেশি বলে দেওয়া হচ্ছে, যাঁরাই বাংলা বলছেন তাঁদের বাংলাদেশি ভাষায় কথা বলছেন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। ’’
এখানেই শেষ নয়, প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জবাব জানার আগেই তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাজারের সংখ্যায় ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে৷ এতে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ৷ তাঁর দাবি, গুজরাতেও একই ঘটনা হচ্ছে। এই মামলায় গুজরাতকেও এই মামলায় যুক্ত করার অনুরোধ জানান প্রশান্ত ভূষণ৷
এদিকে, পাল্টা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘‘কোনও সংস্থা কেন আসছে? কেন ব্যক্তিরা আসছেন না? কিছু সংস্থাকে কিছু রাজ্যের তরফে ব্যাকআপ দেওয়া হচ্ছে। সিস্টেম্যাটিক ইনফিলট্রেশন হচ্ছে। ডেমোগ্রাফি বদলে যাচ্ছে। এজেন্টরা সাহায্য করছে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে। তাঁদের নথিও বানিয়ে দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, অনুপ্রবেশ সমস্যা জাতীয় স্বার্থের বিষয়। এই মামলাকে রোহিঙ্গা মামলার সঙ্গে শোনা হোক বলে আর্জি জানান তুষার মেহতা৷
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ, মায়ানমার থেকে লোক ঢুকেছে…এবার ৩ লক্ষ ভোটারের কাছে গেল SIR নোটিস
শুনানি শুনে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘হাইকোর্ট হেভিয়াস করপাস আটকে রাখতে পারে না। আমরা কেন্দ্রের কাছে জানতে চাইছি, সত্যিই কি এরকম হচ্ছে যে ভাষার কারণে কোনও ব্যক্তিকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে?’’
আদালতের কোর্টকে প্রশ্ন, ‘‘কোনও অনুপ্রবেশকারীকে দেশে পাঠানোর এসওপি কী? আমাদের জানাতে পারেন?’’ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, ‘‘আমরা অস্বীকার করছি না যা এই বিষয়ের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। কিন্তু পঞ্জাব এবং বাংলা একটা লেগেসি ইনহেরিট করেছে। আপনারা আমাদের কী জানাতে পারেন, ভাষার জন্য এরকম কিছু হচ্ছে কি না? ’’
বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি আমেরিকা থেকে কীভাবে ডিপোর্টেশন করা হচ্ছে। আপনারা কি আমেরিকার মতো ডিপোর্টেশন করতে চান? খুবই জটিল ইস্যু।’’ সিরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন— বলে উল্লেখ অনুপ্রবেশের বিষয়কে।