TRENDING:

বিজেপির সাফল্যের পিছনে রয়েছেন আরএসএস-এর এই ৩ মাস্টার মাইন্ড, চিনে নিন তাঁদের

Last Updated:

তবে এই গোটা কর্মকাণ্ডের পিছনে নিঃশব্দে কাজ করে গিয়েছেন আরএসএস-এর তিন পোড়খাওয়া যোদ্ধা ৷ বরাবরই পিছনে থেকে গিয়েছিল যে তিনটি নাম, তাঁরাই নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিদ্রাহীন রাত্রির প্রকৃত কারণ ৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
Report: Sujit Nath
advertisement

#কলকাতা: এর আগে রাজ্যে সর্বোচ্চ লোকসভা আসন ছিল দুই। এবার একলাফে আঠেরো। লোকসভা ভোটের ফলে এরাজ্যে তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। বাম ভোটব্যাঙ্ক শক্তি বাড়িয়ে দিল রাম শিবিরের। শাসক দল তৃণমূলের ভোটের একাংশও গেল পদ্ম শিবিরে। রাজ্যে দুই থেকে দুই অঙ্কের ঘরে বিজেপির আসন।

বরাবর এরাজ্যে পিছনের সারিতেই ছিল বিজেপি। কিন্তু, গতিবদল শুরু হয় গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই।

advertisement

• ২০১৬ সালের পর থেকেই বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে

• ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে উল্লেখযোগ্য ফল করে বিজেপি

• ১৮% গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে

• বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, মালদহ-সহ একাধিক জেলায় ক্ষমতা বাড়ায় বিজেপি

• আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিজেপির সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো

রাজ্যে বিজেপির সম্ভাবনা দেখেই ২০১৯-র অঙ্ক কষা শুরু করেন মোদি-শাহরা। রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট যে ঘরে ঢুকবে না তার আঁচ পেয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তাই, ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশলই মূল অস্ত্র হয়ে ওঠে। বাম ভোটারদের টানতে এরাজ্যেও ত্রিপুরা মডেলের পরীক্ষা করে বিজেপি। তাতেই ভোট শতাংশে চমকপ্রদ উত্থান।

advertisement

তবে এই গোটা কর্মকাণ্ডের পিছনে নিঃশব্দে কাজ করে গিয়েছেন আরএসএস-এর তিন পোড়খাওয়া যোদ্ধা ৷ বরাবরই পিছনে থেকে গিয়েছিল যে তিনটি নাম, তাঁরাই নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিদ্রাহীন রাত্রির প্রকৃত কারণ ৷ তাঁরা হলেন শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন, সুনীল দেওধর ৷

পশ্চিমবঙ্গে কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলতে হবে তার রূপরেখা তৈরি হয়েছিল এই তিনেরই হাত ধরে ৷ ২২ জানুয়ারি মালদহে অমিত শাহের সভা করা নিয়ে প্রথম বাধা এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ৷ শিবপ্রকাশ চাইলেন যোগী আদিত্যনাথ আর অমিত শাহের সভা একসঙ্গে হোক ৷ কিন্তু বিরোধিতা করলেন অমিত শাহ ৷ তাঁর মত, যোগীর মতো হিন্দুত্ববাদ দিয়ে নয়, আঘাত হানতে হবে খোদ মমতার দূর্গে ৷ বহু কাঠখড় পুড়িয়েও সেই সভা হল ৷ নির্ধারিত দিনের দু’দিন আগে ৷ ওই সভা থেকেই হুঙ্কার ছাড়লেন শাহ ৷ বললেন, ‘‘মমতা দি, আপনি ২৩-২৫ জন নেতাকে গুছিয়ে মোদিকে হটাতে পারবেন না ৷’’

advertisement

এখান থেকেই শুরু হল লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির প্রচার ৷ আর সেই প্রচারের প্রতিটি পদক্ষেপে মোদি, অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ, লকেটদের পরিচালিত করলেন তিন যোদ্ধা ৷

১৯৩৯-এ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় হিন্দু মহাসভার সভাপতি নির্বাচিত হন ৷ সেখান থেকেই ভারতীয় জন সঙ্ঘ তৈরি করেন শ্যামাপ্রসাদ ৷ ১৯৫২-তে BJS প্রথম বাংলায় ৬টি আসনে প্রার্থী দেয় ৷ ২টি আসনে জেতে মাত্র ৫.৫৯% ভোট নিয়ে ৷ সেখান থেকে ২০১৯-এ ৪২টি আসনে লড়াই করে ১৮টি আসন ছিনিয়ে এনেছে তারা ৷ তাও আবার ভোটের হার ৪০ শতাংশ ৷ ১৯৩৯ সাল থেকে বাংলায় থাকলেও ৩৪ বছরের বাম জমানায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বিজেপি ৷ উত্তর কলকাতার ৯A, অভিদানন্দ রোডে (বিডন স্ট্রিট) বিজেপির পার্টি অফিস ‘কেশব ভবন’ প্রায় তালাবন্ধই থাকত ৷

advertisement

২০১১-তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক চেহারা বদলে যেতে শুরু করে ৷ এরপর ২০১৪-য় নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসা মানচিত্রটা আরও বদলে দেয় ৷ তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রধান যে জায়গায় বিজেপি কাউন্টার করতে শুরু করে সেটা হল গ্রাম বাংলার তৃণমূল স্তর ৷ ‘জন সম্পর্ক’ গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয় আরএসএসের উপরতলা থেকে ৷ সেই সময়ই সিদ্ধার্থ নাথ সিংকে সরিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীকে রাজ্যের পর্যবেক্ষকের পদে বসানো হয় ৷ ২০১৮-র ৩ অক্টোবর আরএসএস-এর ‘মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট’ অরবিন্দ মেননকে বাংলার কো-অর্ডিনেটর পদে বসান অমিত শাহ ৷

লোকসভা নির্বাচনের আগে News18-এ একটি সাক্ষাৎকারে মেনন বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর মানুষজন ক্ষিপ্ত ৷ তাঁরা নিজেদের প্রতারিত ভাবছেন ৷ CPI(M)-এর থেকেও TMC-র অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে ৷ কারণ এতদিন ধরে মানুষকে ভয় দেখানো আর হুমকি দেওয়ার কোনও সুযোগই তৃণমূল ছাড়েনি ৷ মোদিজি, অমিতজিকেও সমানে হুমকি দিয়ে গিয়েছে তারা ৷ আমার মনে হয়, মানুষ এর জবাব দেবে ৷ আর সে কারণেই বিজেপি এ রাজ্যে একটা বড় অঙ্কের আসন পাবে ৷ যা কেউ ভাবতেও পারছে না ৷’’

মনে রাখতে হবে ২০১৭-তে গুজরাতের বিধানসভা ভোটের সময়ও এই মেননই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ৷ তবে বাংলার চ্যালেঞ্জটা কী রকম তা জানতে চাওয়া হলে মেনন বলেছিলেন, ‘‘আমরা পোস্ট কার্ডের মতো ৷ যে জায়গার ঠিকানা লেখা থাকবে সেখানেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব ৷ আমি পার্টির সৈনিক ৷ সবাই কোমর বেঁধে লড়েছি ৷ এর মধ্যে রয়েছেন কৈলাসজি, দিলীপ ঘোষজি আর বাংলার সমস্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ৷ আমরা এই লোকসভায় ইতিহাস তৈরি করব ৷’’

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম কারিগর ছিলেন শিবপ্রকাশ ৷ তাঁকে বাংলা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ আর উত্তরাখণ্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ তৃণমূল স্তরে তাঁর অভূতপূর্ব কাজ বাংলার ভোটকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছে ৷ ২০১১-র ৪.১% ভোট থেকে ২০১৬-য় ১১%, আর ২০১৯-এ ৪০%-র বিষ্ময়কর মার্জিন ৷

শিবপ্রকাশ জানালেন, ‘‘এখানে আমার বড় চ্যালেঞ্জ হল পরিবর্তন ৷ এখানে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সমস্যা বিপুল ৷ ২০১৫-তে বাংলার দায়িত্ব পেয়েছিলাম ৷ তখন থেকেই আমার এক এবং একমাত্র লক্ষ্য ছিল পার্টি ক্যাডারদের মধ্যে মজবুত যোগসূত্র গড়ে তোলা ৷ আর বাংলার মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা আদায় করা ৷ জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (NRC) নিয়ে ভুল বার্তা ছড়ানোর পরেও আমরা এই কাজটাতে সফল হয়েছি ৷ মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন ৷ আমি জানি না, বাংলায় বিজেপির উত্থানে কেন মানুষ এত অবাক হচ্ছেন ৷ একটা ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে, তৃণমূলের সামনে আর কেউ দাঁড়াতে পারবে না ৷ আসলে ৩৪ বছরের বাম জমানায় এই ধারণাটা গড়ে উঠেছিল ৷ বাংলাও অন্যান্য রাজ্যের মতোই ৷ শুধু আমাদের ধরতে হবে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক রাস্তাটা কোনটা ৷’’

তবে এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের তত্ত্ব মানতে চাননি শিবপ্রকাশ ৷ তাঁর মতে, মোদিজির ‘সোনার বাংলা’-র স্বপ্নের দিকে তাকিয়েই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন সাধারণ মানুষ ৷

আরএসএস-এ আরও একজন নীরব সৈনিক ছিলেন সুনীল দেওধর ৷ তাঁর মতো সু-সংগঠক প্রথম নজরে আসেন ২০১৪-য় মোদির গড় বারাণসীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ৷ শুধু তাই নয়, ২০১৮-য় ত্রিপুরার বাম দূর্গ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার পিছনেও সবচেয়ে মজবুত হাতটি ছিল এই দেওধরের ৷ এই অভাবনীয় সাফল্যের পরেই বাংলার দায়িত্ব পান সুনীল ৷

দেওধর জানালেন, ‘‘আমার জন্য বাংলায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভিতটা শক্ত করা ৷ যেমনটা ত্রিপুরার ক্ষেত্রে করেছিলাম ৷ বুথ ভিত্তিক আর মন্ডল ভিত্তিক কাজ আগে বাংলায় হত না ৷ নির্বাচন আসলে এই দু’টি স্তরেই হয় ৷ এই স্তরেই নজর দিয়েছিলাম আমি ৷ তাতেই সাফল্য আসে ৷ দেখেছিলাম মমতাজির শাসনে প্রচুর অব্যবস্থা রয়েছে ৷ পলিটিক্যাল ক্রাইম প্রচণ্ড হারে বেড়েছে ৷ সারা দেশ জুড়েই মোদি ঢেউ উটেছিল ৷ এই অব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বাংলার মানুষও তাকেই আপন করে নিয়েছেন ৷’’

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
বিজেপির সাফল্যের পিছনে রয়েছেন আরএসএস-এর এই ৩ মাস্টার মাইন্ড, চিনে নিন তাঁদের