সোমবার কালীপুজোর দিন ছিল ‘সবুজ’ কলকাতা। সৌজন্যে সিত্রাং, দূষণ কম। মঙ্গলবার দূষণে ফের কিছুটা হলেও আক্রান্ত শহরের ফুসফুস। শহরের পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ বললেন, ‘‘কালীপুজোয় দেদার বাজি ফেটেছিল। তার জেরে এই দিনটিতে দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে এবার সেই ছবির নজিরবিহীন বদল দেখা যায়। তবে কালীপুজোর পরের দিন মঙ্গলবার রাতভর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দেদার বাজি ফাটানোর জেরে ফের কিছুটা হলেও বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে।’’
advertisement
অন্যদিকে সোমেন্দ্র মোহন ঘোষের চাঞ্চল্যকর দাবি ও প্রশ্ন, আদালতের নির্দেশে এবছর সরকার যে ৯০ ডেসিবেল শব্দসীমা বেধে দিয়েছিল তারপরও 'সবুজ' বাজি যে সমস্ত বাজার থেকে সাধারণ ক্রেতাদের হাতে পৌঁছেছে সেই 'সবুজ' বাজির শব্দসীমা নির্দিষ্ট ৯০ ডেসিবেলের থেকে অনেক বেশি ছিল। তাহলে কিভাবে এই সমস্ত অতিরিক্ত শব্দসীমার বাজি, যেগুলিকে সবুজ বাজি বলা হচ্ছে তা খোলা বাজারে বিক্রি করা হল? শব্দবাজির দাপটের পাশাপাশি মঙ্গলবার যথেচ্ছ আতশবাজির কারণেই ফের দূষণের মাত্রা কিছুটা হলেও বাড়ল বলেই মত পরিবেশবিদদের।
আরও পড়ুন- দুর্ব্যবহার করলেই খাবারের দাম হবে দ্বিগুণ! ব্রিটেনের আজব ক্যাফেতে নীতি পাঠ
প্রসঙ্গত, এবার কলকাতায় কালীপুজোর রাতে কম দূষণের রেকর্ড পরিলক্ষিত হয়। গত ৩০ বছরে এত কম দূষণ দেখা যায়নি। সিত্রাংয়ের জেরে এবার কালীপুজোয় সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়া-বৃষ্টির ফলে কালীপুজোর রাতে দূষণের মাত্রা এবার অনেকটাই কম ছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর কালীপুজোর রাতে ফোর্ট উইলিয়াম, বালিগঞ্জ যাদবপুর, রবীন্দ্র সরোবরে যেখানে দূষণের মাত্রা ছিল মাত্রাতিরিক্ত। এ বছরের কালীপুজোর রাতে সেই দূষণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এ বছর সোমবার ,কালীপুজোয় রাতে ফোর্ট উইলিয়াম এলাকায় বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৯ মাইক্রোগ্রাম। গত বছরে ছিল ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম। বালিগঞ্জে প্রতি ঘনমিটারে ৩৯ মাইক্রোগ্রাম।গত বছরে ছিল ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। রবীন্দ্র সরোবরে প্রতি ঘনমিটারে ৪৩ মাইক্রোগ্রাম। গত বছরে ছিল ১৬৮ মাইক্রোগ্রাম। এবার কালীপুজোর রাতে যাদবপুরে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৪ মাইক্রোগ্রাম। গত বছরে ছিল ২৪৪ মাইক্রোগ্রাম। ভিক্টোরিয়ায় ছিল ৩৯ মাইক্রোগ্রাম। গত বছরে যা ছিল ১৯২ মাইক্রোগ্রাম।
বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে থাকলে 'সবুজ' তালিকাভুক্ত ধরা হয়। অর্থাৎ, এ বছর কালীপুজোর রাতে তিলোত্তমা ছিল 'সবুজ'। যদিও মঙ্গলবার ফের নতুন করে বাজি ফাটানোর ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা খানিকটা বাড়লেও অন্যান্য বছরের মতো উদ্বেগের নয়। বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ও বড় ধূলিকণা অনেকটাই কম। বলছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।