এরপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে রাজনীতির কত জল। কখনও তিন 'বন্ধু' সহমত হয়েছেন, আবার কখনও ভিন্নমত হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু অটুট থেকেছে তাঁদের মধ্যেকার সম্পর্ক। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি অনেক আগেই চলে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিনের হাসপাতাল-বাস ছিল প্রিয়র। গতবছর ৩০ জুলাই চলে যান সোমেন মিত্রও। বাংলায় ডানপন্থী রাজনীতির দুটি ফলা খসে গিয়েছিল আগেই। রয়ে গিয়েছিলেন একা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সোমেন মিত্র মারা যাওয়ার পর 'একাকীত্বের' কথা ভাগ করে নিয়েছিলেন সুব্রত। দুই বন্ধুকে হারিয়ে ভাগ করেছিলেন কষ্টের কথা। আজ সেই তিনিই বিদায় নিলেন চিরতরে।
advertisement
আরও পড়ুন: বিশ্বাস করতেন সাবেকিয়ানায়, শত টানাপোড়েনেও অমলিন সৌজন্য এবং স্মিত হাসি
১৯৪৬ সালের ১৪ জুন বজবজের সারেঙ্গাবাদে জন্ম সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। মফস্সলের ছেলে কলকাতার কলেজে পড়তে পড়তেই কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই সূত্রেই ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে। সত্তরের দশকে প্রিয়-সুব্রত জুটি হয়ে উঠেছিল বাংলার ছাত্র রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। তাঁদের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন সোমেন মিত্রও।
আরও পড়ুন: বিধায়ক হিসেবে পঞ্চাশ বছর পার করেই থামলেন সুব্রত, শুধু রাজনীতির নয়, ক্ষতি অনেক বেশি
একসময় খোদ ইন্দিরা গান্ধির প্রিয়পাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ভোটে জিতে কোনও দিন দিল্লির রাজনীতিতে সেভাবে যেতে পারেননি সুব্রত। কিন্তু রাজ্যস্তরে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অবিসংবাদী। আজ যে মমতা সুব্রত দা'র জন্য নিজের বাড়ির পুজো ফেলে ছুটে গেলেন হাসপাতাল, ২০০৫ সালে সেই তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বিরোধের জেরে তৃণমূল ছেড়ে পৃথক মঞ্চ গড়েছিলেন তিনি। এনসিপি-র ‘ঘড়ি’ চিহ্ন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছিলেন পুরভোটে। সুব্রত নিজে অবশ্য জিতেছিলেন। তবে, ধরাশায়ী হয় তাঁর তৈরি মঞ্চ। পাঁচ বছর পর ফের কলকাতা পুরসভা জেতে বামফ্রন্ট। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে ফিরে যান সুব্রত।
আরও পড়ুন: 'সুব্রত দা'র দেহ দেখতে পারব না', পুজো ফেলে হাসপাতালে ছুটে এলেন মমতা
মমতা-সোমেনের দ্বন্দ্বেই তৃণমূলের জন্ম। একথা বহু চর্চিত হলেও মানতে নারাজ ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মত ছিল, নয়ের দশকের শেষ দিকে কংগ্রেস যেভাবে চলছিল, সেই পথকে সমর্থন করেননি মমতা। তাই ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন। তৃণমূলের জন্মের পেছনে সোমেন মিত্রের কোনও ভূমিকা নেই। দুজনের শেষ দিনে অবশ্য সোমেন-সুব্রত অবশ্য ছিলেন দুই দলের প্রতিনিধি।
রাজ্য রাজনীতি শুধু নয়, কেন্দ্রীয় রাজনীতির অনেক জানা-অজানা ঘটনার সাক্ষী প্রিয়-সোমেন-সুব্রত। অনেক না বলা কথা বলতে সেই প্রিয়-সোমেনের কাছেই চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এই ত্রয়ীর কক্ষপথ থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন দুজন। স্বাভাবিকভাবেই একলা হয়ে পড়েছিলেন সুব্রত। তাই প্রিয় প্রিয়-সোমেনের সঙ্গে একই কক্ষপথে চলে গেলেন সুব্রত।