বাঙালিদের নস্টালজিক সিনেমা হলের মধ্যে রক্সি অন্যতম। ১৯৪০ সালের তৈরি শহরের বুকে চৌরঙ্গি প্লেসে ঐতিহ্যবাহী এই সিনেমা এবার থেকে সম্পূর্ণ ভাবে কলকাতা পুরসভার অফিস হবে। সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে। আদালতের রায়ের পর সম্পূর্ণ ভাবে কলকাতা পুরসভার হাতে চলে আসার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে এই রক্সি সিনেমাকে ব্যবহার করছে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। করোনা কালে ভ্যাকসিন কেন্দ্র এবং বর্তমানে আধার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই হেরিটেজ ভবনকে।
advertisement
আরও পড়ুন জাদুঘরে তখন হাড়হিম বিপদ, AK-47 হাতে ঘুরছেন সেই জওয়ান, সেই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?
ঐতিহ্যবাহী ভবন হওয়ায় রক্সি সিনেমা হলের বাইরের অংশে অবশ্য কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না। পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকে রক্সি সিনেমা হলকে অফিসের কাজের ব্যবহার করার প্রস্তাব পাস হয়েছে। হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটি সম্মতি পাওয়া গেছে বলে জানালেন মেয়র পরিষদ হেরিটেজ বিভাগ স্বপন সমাদ্দার। তিনি জানান, এই ঐতিহ্যবাহী ভবনের ওপরে বেশ কয়েকটি দফতরের কাজ কর্মের জন্য ব্যবহার করা হবে। রক্সির ভিতরের অংশে পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট, মার্কেট বিভাগ এবং বিজ্ঞাপন বিভাগের অফিস তৈরি করা হবে। এতদিন ধরে হেরিটেজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি ছিল। তবে হেরিটেজ কনজারভেন্স কমিটির ছাড়পত্র পাওয়ার পর ঐতিহ্যবাহী রক্সি সিনেমার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তার হেরিটেজ তকমাকে অক্ষুণ্ণ রেখে পুরসভার অফিস তৈরি সম্মতি দিয়েছে হেরিটেজ কমিটি।
ধর্মতলার বুকে চৌরাঙ্গী প্লেসে অবস্থিত ঐতিহ্যশালী রক্সি সিনেমা যাত্রা শুরু করার আগে এটা একসময় ছিল অপেরা হাউস। ১৯৪০ সালে এটি সিনেমা হলে পরিবর্তিত করা হয়। ঐতিহ্য এই সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন। তৎকালীন বিখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমার অভিনীত 'কিসমত' সিনেমা দেখতে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তখন এই সিনেমা ১০৮ দিন ধরে চলেছিল। আসলে রক্সি সিনেমার সঙ্গে অপামার বাঙালির নস্টালজিয়া জুড়ে রয়েছে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই ভবন কলকাতা পুরসভার মালিকানা সম্পত্তি।
আরও পড়ুন: দেশের মানুষ ফিরে তাকায়নি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে দত্তক নিল কানাডার দম্পতি
একসময় বেঙ্গল প্রপার্টিজ প্রাইভেট লিমিটেডকে রক্সি সিনেমা ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিল কলকাতা পৌর সংস্থা। ২০০৭-২০০৮ সালে এই লিজের চুক্তির মেয়াদ হয়ে যায়। কিন্তু তৎকালীন পুর বোর্ড রক্সি সিনেমাকে দখলমুক্ত করতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ড। তৃণমূল কংগ্রেস পুরসভার ক্ষমতায় আসার পর এই বিষয়টি নজরে আসে। তার পরেই তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের মেয়র প্রথমে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম রক্সিকে দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়। সেই সময় এই সংস্থা পুরসভার সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করতে চায়। কিন্তু পুরসভার দাবি মত অর্থ দিতে নারাজ ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই সংস্থা আদালতে মামলা করেন। ২০১৭ সালে ওই মামলার রায়ে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে রক্সিকে পুনরুদ্ধার করা হয়।
তখন থেকেই মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে রক্সি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে কলকাতা পৌর সংস্থার আসেসমেন্ট, বাজার ও বিজ্ঞাপন বিভাগের একটা অংশ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে মেয়র পরিষদ বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তের উপরে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিলমোহর পড়ল। পুজোর আগেই এই তিনটি দফতরকে রক্সি সিনেমার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বর্তমান পুর বোর্ড। পুরসভা সূত্রের, অফিস তৈরি করার কাজ শুরু করা হয়েছে। এতদিন রক্সি সিনেমা হেরিটেজ গ্রেড 2(A) অধীনে থাকার জন্য জটিলতা তৈরি হয়। কিন্তু মেয়র পরিষদ বৈঠকে এই প্রস্তাব পাশ হাওয়ায় এবার সবুজ সংকেত পাওয়ায় দ্রুত এই তিনটি বিভাগের কাজ ঐতিহ্যবাহী রক্সি সিনেমা হলের উপরে অফিস থেকে শুরু হবে।