আশাকাঁথি গ্রামে দুর্গাপুজো হত না। দু’কিলোমিটার দূরে জয়পুরে দুর্গাপুজো হয়। আর নয়তো পাঁচ কিলোমিটার দূরের শিলদায় হয় একাধিক দুর্গাপুজো। গ্রামের মহিলাদের পক্ষে দূরে গিয়ে পুজো দেওয়া ও দেবীদর্শনে সমস্যা হত। সম্প্রতি গ্রামের কয়েকজন উদ্যোগী মহিলার গ্রামে দুর্গাপুজো করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু পুজোর টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে? মুশকিল আসান করে দেন গ্রামের প্রবীণারাই। তাঁরা প্রস্তাব দেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের থেকে সকালে কিছু টাকা দিলে পুজোর কিছুটা খরচ উঠে যাবে। এরপরই গ্রামের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসে মহিলারা তারপর তাঁরা সর্বজনীন পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন।
advertisement
আরও পড়ুন: বিশ্ব পর্যটন দিবসে জলদাপাড়াতে উষ্ণ আতিথেয়তা! খুশিতে মাতোয়ারা ভিন রাজ্যের পর্যটকরা
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে সাধারণ মহিলারা পান ৫০০ টাকা। আর জনজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা পান এক হাজার টাকা। ওই ১৫০ জন মহিলার প্রত্যেকে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে তহবিল গড়েছেন। ১৩ জনের পুজো কমিটিও গঠিত হয়েছে।
আশাকাঁথি সর্বজনীন দুর্গোৎসব মহিলা কমিটির সভানেত্রী শোভারানি চন্দ্ৰ বলছেন, “অনেকদিন ধরেই গ্রামে দুর্গাপুজো করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেননি। অবশেষে আমরাই পুজোর করার সিদ্ধান্ত। নিয়েছি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ১৫০ জন উপভোক্তা মহিলা গ্রামে রয়েছেন। সকলেই অর্থ সাহায্য করেছেন।”
আরও পড়ুন: শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে স্কুল! মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের ক্লাস বন্ধ, কমছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা
পুজো কমিটির সম্পাদক শোভা- শবর, কোষাধ্যক্ষ প্রভাতী শবরের জানান, গ্রামে প্রথমবার দুর্গাপুজোর আয়োজন করার ফলে সকলেই খুবই উৎসাহিত। গ্রামের প্রবীণা আশালতা কুণ্ডু, মেঘরি শবর জানান, সংসার সামলে দূরে গিয়ে পুজো দেখাটা খুবই সমস্যার ছিল। এ বার গ্রামে পুজো হবে। এটাই বড় প্রাপ্তি।
কলেজ পড়ুয়া মানসী চন্দ্র, স্কুল পড়ুয়া প্রীতি নন্দীরাও টিফিনের জমানো টাকা পুজোর তহবিলে দান করেছেন। তাঁরা বলেন, “মায়েরাই মাতৃপূজার আয়োজন করছেন। আমরাও সহযোগিতায় করছি।” আশাকাঁথি পল্লিকল্যাণ ক্লাবের মাঠে পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। পুজোর বাজেট এক লক্ষ টাকা। এর মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তাদের দানে ৭৫ হাজার টাকার সংস্থান হচ্ছে। পুজো কমিটির সভানেত্রী শোভারানি চন্দ্র বলেন, “বিভিন্ন মহলে সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। আশা করছি লক্ষ্যপূরণ হবে।” প্রতিমা গড়ছেন শিলদার মৃৎশিল্পী বাসুদেব কর।
রাজু সিং