বৈঠক শেষে সের্গেই কিসলিৎসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাশিয়া নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে৷’’ এখানেই শেষ নয়৷ কিয়েভের সামনে একের পর এক কড়া দাবি রেখেছে ক্রেমলিন৷ রাশিয়া ইউক্রেনকে একটি শান্তি স্মারক প্রস্তাব করেছে৷ সেখানে তারা দাবি করেছে, ক্রিমিয়া, ডনবাস, খেরসন এবং জাপোরোজিয়েকে (যা ইউক্রেনের অংশ বলে বর্তমানে স্বীকৃত) রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
advertisement
এছাড়াও, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নাৎসি প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা, ন্যাটো বা কোনও সামরিক জোট থেকে ইউক্রেনের দূরত্ব, নতুন করে রাশিয়ার দখলে যাওয়া এলাকাগুলি থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনে জাতীয় নির্বাচন করানো ইত্যাদি রাশিয়ার শর্তের মধ্যে অন্যতম।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন যে, ‘‘উভয় দেশ নতুন করে একটা বন্দী বিনিময় নিয়ে কথা বলছে৷’’ তাঁর প্রধান কর্মীও জানিয়েছেন যে, সোমবারের আলোচনার সময়, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল রাশিয়াকে একটি তালিকা দিয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে নির্বাসিত শিশুরা, যাদের ফেরত চেয়েছে ইউক্রেন।
আরও পড়ুন: ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে এবার বড় সিদ্ধান্ত! পোর্টাল UMEED…সময় দেবে ৬ মাস, তারপরই…
এর আগে গত ১৬ মে রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম আলোচনা হয়েছিল৷ যে বৈঠক প্রায় ২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল৷ সেবার একটা বৃহৎ সংখ্যক বন্দি বিনিময় হয়েছিল দুই রাষ্ট্রের মধ্যে৷ কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য৷ পার্ল হারবারের কায়দায় রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে রবিবার হামলা চালানো হয়েছে ইউক্রেনের তরফে৷ যার পিছনে ন্যাটোর মতো সামরিক বাহিনীর মদত রয়েছে বলে মনে করছে রাশিয়া৷ এরপরই তারা কড়া অবস্থান নিয়েছে৷
রাশিয়ার প্রধান নেগোশিয়েটর ভ্লাদিমির মেদিনস্কি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মস্কো ২-৩ দিনের সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করছে৷’’ মেদনস্কি জানিয়েছেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট ফ্রন্ট লাইনের কিছু এলাকায় দুই থেকে তিন দিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করেছি যাতে কমান্ডাররা তাঁদের সৈন্যদের দেহ সংগ্রহ করতে পারেন।’’
আরও পড়ুন : মেসের বাথরুম খুলতেই…চিৎকার! এ কী করল মেয়েটা..কী এমন ঘটেছিল বাড়ি ফেরার পর
ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে জুন মাসের শেষের আগে পরবর্তী দফার আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ সোমবারের আলোচনার পর বলেন, ‘‘আমরা রাশিয়াকে এই মাসের শেষের মধ্যে, ২০ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে একটি বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছি৷’’ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে,প্রতিনিধিদল অর্থাৎ, তাঁরা চেষ্টা করছেন, যাতে খুব তাড়াতাড়িু ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটা বৈঠক হয়।
রবিবার সাইবেরিয়া এবং অন্যান্য স্থানে রাশিয়ার পারমাণবিক-সক্ষম দীর্ঘ-পাল্লার বোমারু বিমান লক্ষ্য করে। রিপোর্ট অনুযায়ী, আক্রমণগুলি রাশিয়ার আর্কটিক, সাইবেরিয়া এবং দূর প্রাচ্যের ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে, যা ইউক্রেন থেকে ৭,০০০ কিলোমিটার দূরে।
ইউক্রেনের সংসদের সদস্য কিরা রুডিক কিয়েভের ড্রোন অপারেশনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘‘৪০টি রাশিয়ান জেট ধ্বংস করা কাকতালীয় নয়। রাশিয়া আমাদের উপর ৫০০টি ড্রোন এবং মিসাইল নিক্ষেপ করছে – এটি কেবল সময়ের ব্যাপার যে এবার ওরাও ক্ষতির মুখ দেখতে পাবে।’’
এই ড্রোন হামলায় ক্ষতির আনুমানিক খরচ ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে৷ যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার বিমান সম্পদের উপর সবচেয়ে ব্যয়বহুল একক আক্রমণগুলির মধ্যে একটি।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অপারেশনটিকে ‘উজ্জ্বল’ বলে অভিহিত করেছেন, যোগ করেছেন যে এই ধরনের বিপর্যয় রাশিয়াকে কূটনৈতিক সমাধান এবং শান্তির দিকে ঠেলে দেবে।