নিউ ইয়র্কে ইতিহাস গড়া মামদানির জয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল কড়া চাপা উত্তেজনা। প্রকাশ্যে মাসের পর মাস একে অপরকে কটাক্ষ করে এসেছেন তাঁরা—ট্রাম্প যেখানে মামদানিকে “কমিউনিস্ট”, “লুনাটিক” বলেছিলেন, মামদানি সেখানেই তাঁকে “ফ্যাসিস্ট” ও “স্বৈরাচারী” আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে এই বৈঠক নিয়ে আশঙ্কা ছিল নতুন উত্তেজনার।
কিন্তু প্রত্যাশার ঠিক উল্টো ছবি দেখা গেল। হাসিমুখে বেরিয়ে এসে ট্রাম্প মামদানির প্রশংসা করেন এবং তাঁর নতুন দায়িত্বে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দেন। মামদানিও অতীতের তিক্ততা খানিকটা সরিয়ে রেখে জানান, বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে এবং নিউ ইয়র্কের স্বার্থে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করবেন।
advertisement
‘ফলপ্রসূ আলোচনা’
বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, “তিনি সত্যিই এক অসাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। প্রাইমারি থেকেই কঠিন প্রতিযোগিতা ছিল। তিনি তাঁদের হারিয়েছেন, তাও সহজেই। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আবাসন, খাদ্যদ্রব্যের দাম, জ্বালানির মূল্য—বহু বিষয়ে আমাদের অভিন্ন অবস্থান রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তিনি যত ভালো করবেন, আমি ততই খুশি। এখানে কোনও পার্টির ভেদাভেদ নেই। আমরা তাঁকে সহায়তা করব যাতে নিউ ইয়র্ক আরও নিরাপদ ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।”
মামদানি জানান, বৈঠকটি নিউ ইয়র্ক শহরকে কেন্দ্র করে—আবাসন সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, পরিষেবা খরচ—সব দিকেই তাঁদের আলোচনা হয়েছে। “নিউ ইয়র্কে বসবাস আরও সাশ্রয়ী করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি,” বলেন মামদানি।
হালকা রসিকতা, নরম সুর
সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু হালকা মুহূর্তও তৈরি হয়। ট্রাম্প যখন নিজের “কমিউনিস্ট” মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন, তিনি হাসতে হাসতে বলেন, মামদানির “কিছু ভাবনা একটু আলাদা ধরনের”, কিন্তু “সবাই বদলায়, আমিও বদলেছি।”
মামদানি যখন নিজের “ফ্যাসিস্ট” মন্তব্য সম্পর্কে জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, ট্রাম্প তাঁর হাত ছুঁয়ে বলেন, “ঠিক আছে, ‘হ্যাঁ’ বললে চলে যাবে। ব্যাখ্যা করতে হবে না।” মুহূর্তটি ওভাল অফিসে হাসির তরঙ্গ তোলে।
অ্যাফোর্ডেবিলিটি—দুই নেতার অভিন্ন ইস্যু
নিউ ইয়র্ক শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। মামদানি বলেন, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া বহু নিউ ইয়র্কার একই সমস্যায় ভুগছেন—ভাড়া, বাজারদর, বিদ্যুৎ বিল—সব ক্ষেত্রেই চাপ বাড়ছে। ট্রাম্পও একমত হয়ে বলেন, “নতুন শব্দ হচ্ছে অ্যাফোর্ডেবিলিটি। আরেকটা পুরনো কিন্তু খুব সঠিক শব্দ—‘মুদিখানা’। দাম কমছে।”
মামদানির প্রতি ট্রাম্পের প্রশংসা
ট্রাম্প একাধিকবার জানান, মামদানির সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য থাকলেও আবাসন, অপরাধ দমন, শহর পুনর্গঠন—অনেক বিষয়ে তাঁদের ভাবনা মিলছে। এমনকি তিনি বলেন, মামদানির মেয়রত্বে নিউ ইয়র্কে থাকতেও তাঁর আপত্তি নেই।
নির্বাচনের পরে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল ফান্ড কেটে দেওয়ার হুমকি থেকেও পিছিয়ে আসেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, “তাকে সাহায্য করাই আমার লক্ষ্য। ভেবেছিলাম আমাদের মধ্যে বেশি অমিল থাকবে, কিন্তু তা নয়।”
বৈঠক শেষে দুই নেতা করমর্দন করেন। ট্রাম্প বলেন, ভবিষ্যতেও আরও বৈঠকের আশা করছেন। “পার্টি পরিচয় বা অন্য কিছু নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। শহরটা দুর্দান্ত হলে আমিও খুশি হব, আর তিনি যদি অসাধারণ সাফল্য পান, তাহলে আরও ভালো।”
