নিউজ ১৮-এর হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইজরায়েলে হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, তার সঙ্গে পহেলগাঁও হামলার যথেষ্ট মিল খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা৷ এই সূত্র মিলিয়ে গোয়েন্দারা দাবি করছেন, জঙ্গিদের মধ্যে যে সমীকরণ গড়ে উঠেছে, তা ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্বের জন্যই অত্যন্ত উদ্বেগের৷
হাত মিলিয়েছে আইএসআই-হামাস, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে শোভাযাত্রা
advertisement
ভারতীয় গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই প্রমাণ পেয়েছেন, প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই৷ পহেলগাঁওয়ে যে চার জঙ্গি হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ, তাদের মধ্যে দু জন পাকিস্তানের নাগরিক, বাকি দু জন কাশ্মীরের৷ এদের প্রত্যেককে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল৷ সেখানে লস্কর ই তৈবা, জৈশ ই মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনের পরিকাঠামো ব্যবহার করে এবং আইএসআই-এর মদতে জঙ্গিদের হামাস প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলেও খবর উঠে এসেছে৷
আরও পড়ুন: অভিনন্দন বর্তমানের মিগ ২১-কে ধ্বংস করেছিলেন, ভারতকে বড় হুঁশিয়ারি পাক বায়ুসেনার সেই অফিসারের
কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রের দাবি, ইজরায়েল যে হামাস নেতাদের সম্প্রতি মুক্তি দিয়েছে পাক সরকারের আমন্ত্রণে তারা পাকিস্তানে আসে৷ পাকিস্তানের মাটিতে পা দেওয়ার পর ওই হামাস নেতাদের রীতিমতো এসকর্ট করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে লস্কর এবং জৈশ জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়৷
সেই সফরের সময়ই রাওয়ালকোটে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়৷ সেই শোভাযাত্রায় হামাস নেতাদের ঘোড়ার পীঠে চাপিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীর তকমা দেওয়া হয়৷ হামাস মুখপাত্র খালিদ কোয়াদ্দৌমি এবং নাজি জাহির ছাড়াও সংগঠনের দুই শীর্ষ মাথা মুফতি আজম এবং বিলাল আলসাল্লাত ওই শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন৷ অন্যদিকে লস্কর এবং জৈশের একাধিক শীর্ষ কম্যান্ডার এবং মূল মাথারাও সেখানে ছিল৷ ওই শোভাযাত্রা থেকেই বার্তা দেওয়া হয়, প্যালেস্তাইনের মতোই কাশ্মীরও একই ধরনের ইসলামিক জেহাদের অংশ৷ ভারত এবং ইজরায়েলকে একই আসনে বসিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার ডাক দেওয়া হয় ওই শোভাযাত্রা থেকে৷
বাংলাদেশেও হামাস নেতৃত্ব!
তবে শুধু পাকিস্তান বা পাক অধিকৃত কাশ্মীর নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেও হামাস নেতারা পা রেখেছেন বলে খবর রয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে৷ গত বছরের ৭ অক্টোবর ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, আইএসআই-এর কর্তারা হামাস নেতাদের নিয়ে ঢাকা পৌঁছন৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল হামাসের ভাবধারা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে অস্থিরতা তৈরি করা৷ ইসলামিক সংগঠন আল মারকাজুল ইসলামি ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল৷ এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মুফতি শহিদুল ইসলাম একজন ইসলামিক চরমপন্থী হিসেবেই পরিচিত৷ আল কায়দার সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে তাঁর৷
১৯৯৯ সালে খুলনার একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়৷ সেই ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে গ্রেফতার হন এই শহিদুল ইসলাম৷ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে আল কায়দার শাখা সংগঠনগুলির থেকে বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নেন শহিদুল৷ ২০২৩ সালে মৃত্যু হলেও এখনও বাংলাদেশের জেএমবি-র জঙ্গি সংগঠনে শহিদুলকে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই গণ্য করা হয়৷
গত অক্টোবর মাসে ঢাকার ওই সম্মেলনেও হামাসের দুই শীর্ষ মাথা শেখ খালেদ কুদ্দুমি এবং শেখ খালেদ মিশাল অংশ নিয়েছিলেন৷ অন্যদিকে পাকিস্তানের চরমপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত দুই পরিচিত মুখ শইকুল ইসলাম মুফতি টাকি উসমানি এবং মৌলানা ফজলুর রহমানও ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন৷
কী কৌশল নিচ্ছে ভারত?
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার উপযুক্ত জবাব দিতে সামরিক প্রস্তুতি যেমন চলছে, একই সঙ্গে এই সমস্ত তথ্য প্রমাণ দেখিয়ে কূটনৈতিক দিক দিয়ে গোটা বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও শুরু করেছে নয়াদিল্লি৷ এমন কি, বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তির নেপথ্যেও বিদেশের মাটিতে সাজানো কোনও চক্রান্ত রয়েছে কি না, তাও খুঁটিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷
