কয়েক বছর আগে রাতারাতি নোট বন্দি। দুর্নীতি দমনে তড়িঘড়ি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। প্রভাব পড়েছিল দেশের প্রায় সর্বস্তরের মানুষের উপর। গ্রাম বা শহরের মানুষ কেউ রক্ষা পায়নি। আজও অভিযোগের সুর শোনা যায় মানুষের গলায়। এর প্রভাবে হাওড়া জেলায় বেশ কিছু শিল্পে পড়ে। ফলে মানুষের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যায়। জেলার বহু মানুষ জরি শিল্পের উপর নির্ভর করতেন। কোনরকমে টিকে রয়েছে এই শিল্প। যদিও নোট বন্দির আগে থেকেই দুরাবস্থা জরি শিল্পীদের।ক্ষতিগ্রস্ত হয় জরির কাজের ব্যবসা। বহু মানুষ হয়ে যায় কাজ হারা। এই কাজে যুক্ত থাকা নাসিরের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই সময়। হঠাৎ উপার্জন বন্ধ হওয়ার ফলে দরুন সমস্যায় পড়তে হয়েছিল জানান, নাসির।
advertisement
পরিবার নিয়ে দারুণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। টানা কয়েক মাস কাজ হারা হয়ে থাকা। চেষ্টা করেও কোন কাজ মেলেনি। ব্যবসা করতেও প্রয়োজন পুঁজি। কিছু না পেয়ে সামান্য কিছু পুঁজিতে চায়ের দোকান খোলে। কঠোর পরিশ্রমে কয়েক পর চায়ের দোকান ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বর্তমানে দূর দূরান্তে ‘ফালতু চা’-এর সুনাম ছড়িয়েছে। হাওড়ার খাঁদারঘাট মানেই ‘ ফালতু চা ‘। নাসিরের এই চায়ের দোকানে শুধু পুরুষ নয়, প্রচুর মহিলাও চা খেতে আসেন।
আরও পড়ুন: বডি-ওয়াশ মুখে লাগান? এতে কী ক্ষতি হচ্ছে নাকি মুখের ত্বকের জন্য দারুণ ভাল! জানুন
চায়ের স্বাদ ভাল , এই নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। তবে চা বিক্রেতার রসিকতা কথা বা কথার রসের টানে বহু খরিদ্দার আসে। নাসির জানান, শুরুতে বেশ কয়েক রকম চা তৈরি করা হত। দামও ছিল ৫ টাকা থেকে ২৫ বা ৩০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে শুধু একটাই চা ভাঁড়, যার দাম ৭ টাকা। মহিলাদের জন্য প্রতি ভাঁড়ে ১ টাকা কম। বয়স্কদের জন্য প্রতি ভাঁড়ে ২ টাকা কম। ১০০ দিনের কাজের শ্রমিক ও সমাজ সেবিদের জন্য বিনামূল্যে চা। বিক্রেতা নাসির জানান, সারা সপ্তাহে ১৫০০ -১৬০০ মানুষ চা খেতে আসে। রবিবার হলে ২০০০ – ২১০০ মানুষ আসে। অনুষ্ঠানে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তেমনি আবার নবী দিবসের দিন যত মানুষ চা খেতে আসেন তাদের চা বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
‘ফালতু চা’ এমন নাম রাখার যৌক্তিকতা কি উত্তরে নাসির জানায়, এই দোকান বা ব্যবসা সাধারণ মানুষের উপর নির্ভর। তাই সার্টিফিকেট বা সুনাম তাদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে দেখা যায় দোকান মালিক বা ব্যবসায়ী নিজের জিনিস স্পেশাল বা সুস্বাদু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করে ব্যবসা চালায়। কিন্তু আমি মনে করি, নাম যাই হোক না কেন আসল হল প্রোডাক্ট। কোয়ালিটি ঠিক রাখতে পারলে নাম যাই হোক না কেন জনপ্রিয়তা হবে। আসলে বুঝতে হবে ক্রেতা বা সাধারণ মানুষের বিচার বুদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। ভাল মন্দের বিচার তারাই করবে। তাতেই ব্যবসার শ্রী বৃদ্ধি ঘটতে পারে। নিজের সেই ভাবনার উপর ভিত্তি করেই দোকানের নামকরণ ‘ ফালতু চা ‘। শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে খাঁদার ঘাটের বিখ্যাত ‘ ফালতু চা ‘ এর। দোকানে আসা ক্রেতারা জানাচ্ছেন, এমন চা যেমন খুব কম মিলবে তেমনি এমন বিক্রেতাও মেলা ভার।
রাকেশ মাইতি