১৯৯০ সালে, স্বপন পাল তখনও যুবক। শক্তপোক্ত হাতে রয়েছে ট্রাকের স্টিয়ারিং। দু’চোখে হাজারও রঙিন স্বপ্ন। হঠাৎ সব কিছু তছনছ করে দেয় একটি দুর্ঘটনা। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় চালক স্বপনের বাদ যায় একটি পা। হঠাৎ যেন কালো মেঘ নেমে আসে জীবনে। তারপর চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠা। যদিও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চলার সৌভাগ্য হয়নি। এর মাঝেই পরিবারে দারুণ অর্থনৈতিক সমস্যা দিনের পর দিন কাজহারা। তারপর লড়াই আর লড়াই, কেটে যায় বেশ কয়েকটা বছর। এর মাঝে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি স্বপন।
advertisement
অবশেষে দীর্ঘ লড়াই শেষে রং তুলিতে মেলে সফলতা। বছর ৫৩-এর স্বপন পাল, মাটির ঘট-সহ নানা সামগ্রী কিনে নিয়ে এসে তুলির আঁকিবুকিতে সাজিয়ে তোলাই স্বপন বাবুর কাজ। দুর্ঘটনায় পা হারিয়েও হার না মানা লড়াই তাঁর। একটা সময় অর্থনৈতিক সমস্যা এতটাই জেঁকে বসেছিল যে, সংসার করবে সেটা ভাবতেই পারেননি।
বর্তমানে বাড়িতে থেকেই দিন কাটে স্বপনের। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর আবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রং তুলি নিয়ে বসে পড়া। এভাবেই কেটে গিয়েছে প্রায় দুই দশক। যদিও বর্তমানে কৃত্রিম পা নিয়েই আবার একটু একটু হেঁটে চলা। স্বপ্নের হাতে তুলির টানে ঘট, হাড়ি ও পুজোর মাটির জিনিসের চাহিদা বেড়েছে। ঘুচেছে অভাব অনটন। সারা বছর কম বেশি হাতে কাজ থাকলেও পুজো এলে দারুণ চাহিদা হয় এই জিনিসের।
তাঁকে ভীষণ ভাবে কাজে সহযোগিতা করে মামাতুতো ভাই পলাশ পাল। এ প্রসঙ্গে স্বপন পাল জানান, বর্তমানে এই মাটির তৈরি জিনিসের বেশ চাহিদা। এখন আর প্রয়োজনে কারও আশায় থাকতে হয় না। দিন দিন চাহিদাও বেড়েছে। খুচরো ছেড়ে পাইকারি খরিদ্দার এসেছে। সব মিলিয়ে দুঃখ ভুলে হাসতে শিখেছে স্বপন। কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে থেকেও জীবনে আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, তা আবারও প্রমাণ করে দেয় স্বপনের এই জীবন কাহিনি।
রাকেশ মাইতি