বর্তমান সময়ে এখনওমরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে মানুষের মনে বহু সংকোচ রয়েছে। তবে হুগলি শ্রীরামপুরের এমন এক ব্যক্তি রয়েছেন যিনি লড়াই করে আসছেন মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য। যাঁর, কাজ সকাল হলেই বিভিন্ন শ্মশান বা হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়ে মানুষজনকে অঙ্গীকারবদ্ধ করার মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা পেশায় আইসক্রিম ব্যাবসায়ী শ্রীদাম সাহা, সকাল হলেই খোঁজ করেন কোথাও কেউ মারা গেছে কিনা। হাসপাতাল কিংবা মরা বাড়ি অথবা শ্মশান, সব জায়গাতেই তিনি ছুটে যান মৃতদেহ থেকে চোখ সংগ্রহ করার জন্য। তার আর্জি, চোখ দুটিকে পুড়িয়ে নষ্ট করবেন না, দয়া করে চোখ দুটি দান করে দিন।
advertisement
সেই আর্জি মেনে অবশ্য চোখ পাওয়া অত সোজা নয়, বেশির ক্ষেত্রেই “না হবে না” বলে দেওয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তার আর্জি মেনে মৃতের পরিবার মৃত দেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়। বহু মানুষ মৃত্যুর আগে চক্ষুদানের অঙ্গীকার করে যায়, আবার বহু ক্ষেত্রে বুঝিয়ে সরাসরি মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। নিজেই তাঁর কাছে থাকা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচার করে মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যেই চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায়, না হলে সেই কর্নিয়া কোনও কাজে লাগে না।
আরও পড়ুন : স্বপ্ন IAS অফিসার হওয়া, রোজ ৪০ কিমি সাইকেল চালিয়ে খাবার ডেলিভারি দরিদ্র ছাত্রের
১৯৮০ সালে ২২ বছর বয়স থেকেই মহত এই কাজটি করে চলেছেন শ্রীদামবাবু। এখনওপর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন তিনি ও তাঁদের সংগঠন । একটা সময়ে একা তিনি এই কাজটি করলেও বর্তমানে তার ছেলে সায়ক সাহাকে পাশে পেয়েছেন তিনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ট্রেনিং নিয়ে বাবার এই মহত কাজের অংশীদার হচ্ছেন সায়ক। সিদাম বাবুর এই কর্মকাণ্ডের জন্য পাশে পেয়েছেন বহু মানুষকে, প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রীরামপুর সেবা কেন্দ্র চক্ষু ব্যাঙ্ক।
শ্রীদামের আক্ষেপ, বর্তমানে এই কাজে বর্তমান প্রজন্মের কেউ সে ভাবে এগিয়ে আসতে চাইছেন না। তিনি চাইছেন এখনকার জেনারেশন এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসুক। তাহলে অবশ্যই আরেও বেশি করে সম্ভব হবে অন্ধ জনের চোখে আলো ফোটানো।