হুগলির চন্দননগরের বারাসত এলাকায় জিটি রোডের উপরে প্রায় ২০০ বছর ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই মিষ্টির দোকান। সূর্য মোদকের যাত্রা শুরুর কাহিনিও বেশ মজার। ১৮৮৩ সালে, পেলিনি পাড়ার জমিদার গৃহিনীর আবদার আসে, এক নতুন ধরনের মিষ্টি বানাতে হবে, যা খাইয়ে তিনি তাঁর নতুন জামাইকে ঠকাতে পারবেন। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব!
advertisement
সূর্য মোদক ও তাঁর পুত্র সিদ্ধেশ্বর মোদকের উপর এসে পড়ে সেই দায়িত্ব। অনেক ভেবেচিন্তে বাবা ও পুত্র মিলে এমন এক নতুন সন্দেশ আবিষ্কার করলেন, যার আকৃতি অনেকটা তালশাঁসের মতো। তার ভিতরে সুগন্ধি গোলাপ জল ও চিনির রস ভরে তৈরি করলেন নতুন এক মিষ্টি৷ যার নাম জলভরা সন্দেশ। জমিদার বাড়িতে পাঠানো হল সেই সন্দেশ। জমিদারের নবজামাতা সেই সন্দেশে কামড় দিতেই সন্দেশের ভিতর থেকে রস ছিটকে বেরিয়ে ভিজে গিয়েছিল তার সাধের গরদের পাঞ্জাবি।
এই ঘটনায় জামাই বাবাজি যেমন লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই জমিদার বাড়ির মহিলা মহলে হাসির ফোয়ার ছুটেছিল জামাই বাবাজি ঠকেছে বলে। তারপরেই সূচনা হয় বঙ্গীয় মিষ্টান্নের এক নতুন অধ্যায়ের। জন্ম লগ্ন থেকেই খ্যাতির শিখড়ে পৌঁছে যায় জলভরা তালশাঁস সন্দেশ৷ পরবর্তীতে সেই সন্দেশর নাম হয় শুধুই জলভরা সন্দেশ।
আরও পড়ুন: ফুটবলের রঙ কেন সাদা-কালো হয়? জানেন! প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবেন না অনেকেই
বর্তমানে পুরাতন ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুনের যে মেলবন্ধন তাও ধরা পরে এই সন্দেশের মধ্যে দিয়ে। এখন জল ভরা সন্দে শুধুমাত্র গোলাপ জলের নির্যাস দিয়ে তৈরি হচ্ছে এমনটা নয়। তার সঙ্গে তৈরি হচ্ছে পাকা আমের জলভরা সন্দেশ। যার ভিতর থাকছে আমের রস। তার সঙ্গে শীতকালের নলেন গুড়ের জলভরা তো রয়েছেই। এছাড়াও বিভিন্ন অকেশানে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমারি জলভরা। বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি করা হয় জাম্বো জলভরা সন্দেশ।
বর্তমান দোকান মালিক শৈবাল মোদক তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র জামাইষষ্ঠী নয় যে কোনও অনুষ্ঠানে জল ভরা সন্দেশে চাহিদা থাকে তুঙ্গে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জলভরা সন্দেশর নতুন নতুন ফিউশন তৈরি হচ্ছে৷ তবে আজও এই সন্দেশ তৈরি হয় পুরাতন প্রথা মেনেই।’’
রাহী হালদার





