শ্রীরামপুরের দম্পতি বিশ্বজিৎ পল্লে ও মলতি পল্লের মেয়ে সৌমি। বাবা বিশ্বজিৎ শারীরিক ভাবে অসুস্থ, তার জীবিকা নির্বাহের জন্য ভরসা একটি ছোট্ট চায়ের দোকান। চায়ের দোকান চালিয়েই চলে তাদের সংসার। ছোটবেলায় মেয়ে যখন ক্লাস থ্রিতে, তখন তার পায়ের ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য তাকে যোগাসনে ভর্তি করেছিলেন। সেই থেকেই শুরু সৌমির যোগাসনের অধ্যায়। তারপর থেকেই একের পর এক সাফল্য অর্জন করে আসছে ছোট্ট সৌম্। সম্প্রতি আসামের গৌহাটিতে আয়োজিত জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে স্বর্ণ পদক নিজের নামে করেছে সে।
advertisement
এখন সৌমি শ্রীরামপুর রমেশ চন্দ্র গার্লস স্কুল এর ক্লাস ১১-এর ছাত্রী। পড়াশোনা ও যোগাসনের পাশাপাশি প্রতিদিন তাকে থাকতে হয় বাবার চায়ের দোকানে, মা-বাবাকে কাজে সাহায্য করার জন্য। সকালে স্কুল যাওয়ার আগে ও বিকালে স্কুল থেকে ফেরার পর বেশ কিছুটা সময় তাকে কাজ করতে হয় বাবার চায়ের দোকানে। পুরষ্কার জয়ের পরের দিনই তার বাড়ি গেলে সৌমিকে দেখা যায় বাবার চায়ের দোকানে চা তৈরি করতে। এরই মধ্যে সময় বার করে চলে যোগাসনের প্র্যাকটিস।
এই বিষয়ে সৌমি জানায়, পরিস্থিতির চাপে পড়ে তাকে সব কাজ করতে হচ্ছে। বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয় তাই সে বাবাকে কাজে সাহায্য করে। সমস্ত কাজ করেও দিনে ২-৩ ঘন্টা সে যোগাসনের অধ্যাবসায় জন্য অতিবাহিত করে। সৌমির স্বপ্ন আগামীতে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের হয়ে যোগাসনে পদক জয় করার। তবে তাদের পরিবারের যে আর্থিক সঙ্কট, দুশ্চিন্তাই তাকে বিচলিত করে তোলে। সৌমি আরও জানায়, সরকারিভাবে যদি কোনও সাহায্য মেলে তাহলে আগামীতে আরও বেশি করে ভাল ফল করার চেষ্টা করবে সে।
আরও পড়ুন- বিয়ের পরই চোখে জল ‘নববধূ’ সন্দীপ্তার! কারণটা কী? শুনলে আঁতকে উঠবেন
সৌমির বাবা বিশ্বজিৎ বলেন, মেয়ে যখন ক্লাস থ্রি তে তখন তার পায়ে ব্যথা ছিল। সেই ব্যথা দূর করার জন্য তাকে যোগাসনে ভর্তি করা। তাদের সংসার ভালই চলছিল কিন্তু কাল হয়ে আসে শারীরিক অসুস্থতা। বছর ৫ আগে হঠাৎ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেই থেকেই চলছে তাদের পরিবারের আর্থিক সঙ্কট। পরিবারের জন্য তার মেয়ে ও স্ত্রী তাকে কাজে সাহায্য করে।
সৌমির যোগাসনের কোচ দেবাশিস বলেন, ছোটবেলায় যখন তার কাছে ভর্তি হয়েছিল তার এক বছরের মধ্যেই প্রথমবার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সেই থেকেই শুরু যোগাসনে পদক জয়ের পালা। সম্প্রতি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক জয় করেছে। আগামীতে আন্তর্জাতিক স্তরেও ভাল ফলাফল করবে সৌমি, এমনটাই আশাবাদী তার কোচ।
রাহী হালদার