‘‘সবার জন্য নতুন জামা, রঙিন সকাল,আমার জন্য কেন মাগো, ধূসর শরৎকাল.......’’ ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে গণেশ। জল ভরে, কাপ-ডিশ ধুয়ে, বেঞ্চি পেতে, সাজিয়ে ফেলে দোকান। কাঠ-কয়লা দিয়ে এবার উনুন জ্বালবে। একটু পরেই এসে পড়বে বিশুদা। সামনের বাড়ির রেডিওটা বেজে ওঠে। আজ মহালয়া.....পুজো আসছে।
এই গণশা..একটা চা দে তো......চিনি কম........হাঁক দেন নরেন কাকু
advertisement
একি কাকু, মহালয়া শুনছ না? ........গণশা জিজ্ঞাসা করে
তোর কিরে..মহালয়ার তুই কি বুঝিস.? ........ঝাঁঝিয়ে ওঠেন কাকু..........
এগারোর গণশার মনের কাশফুল গুলো ঝিমিয়ে পড়ে। গণশার চোখেই এবার পুজো দেখা দমদমপার্ক তরুণ সংঘে। চায়ের দোকান থেকে পুকুর পাড়। চারদিকে ছড়িয়ে কেটলি, হাতা, খুন্তি, বয়াম, টি-ব্যাগ, সসপ্যান, ছাকনি, তেলের টিন, চায়ের গ্লাস....আর কতকিছু। প্রায় বাইশ রকম জিনিস দিয়ে সেজে উঠছে গণেশের জগৎ।
পুজোয় ছুটি নেই। ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত খোলা দোকান। খাটনি বাড়ে। চায়ের ফুটন্ত বুদবুদ আর এঁটো কাপ-ডিশ ধুয়েই কাটে পুজো।
দশমীর সন্ধে থেকে দোকান বন্ধ। পুকুরপাড়ে বিসর্জনের ঢাক বাজে.. যেন গণশাকে ডাকে। আজ কেন ঝাপসা চোখের কোনটা? আধডোবা দুর্গা মনে করায় মায়ের মুখ। ভিড়ের মধ্যে শিশু মন উত্তর খোঁজে , কবে মিলবে মুক্তি? আবার কি সেই পরের বছর?
শহরের অলিগলিতে স্বপ্ন চুরমার হয় গণেশদের... পেট যে আসলে যম। শিশুশ্রমে চুরি যায় শৈশব। দুর্বল বর্তমান জন্ম দেয় ভঙ্গুর ভবিষ্যতের। দশ হাত ধরেই কী শাপমুক্তি? কালচে জীবনে কী হয়ে উঠবে রঙিন? প্রশ্ন থেকে যায়.........
‘আমরা শিশু শ্রমিক শুধু ভাত চাই....
শিশুশ্রম তুলে দিলে পেটে ভাত নাই......
আগে ভাত দাও বাবু, পরে তুলো শ্রম...
পেট বড় যম বাবু, পেট বড় যম..........’
